প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে রাজাপক্ষেকে নিয়োগ, সংকটে শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের নাম ঘোষণা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের উদ্দেশে একটি আনুষ্ঠানিক নোটিশ জারি করে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বলে আজ শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রনিল বিক্রমসিংহে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ‘টেম্পল ট্রিস’ দখল করে সেখানেই অবস্থান করছেন। তিনি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে দেওয়া এক চিঠিতে বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছেন।
অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। শপথ নেওয়ার পর মন্দিরে পূজা-অর্চনায়ও অংশ নিয়েছেন রাজাপক্ষে।
রনিল বিক্রমসিংহে বলেছেন, ‘শুধুমাত্র জাতীয় সংসদই আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকার রাখে।’
শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংসদে বিক্রমসিংহের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকা অবস্থায় তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিলেন প্রেসিডেন্ট।
এ ছাড়া বিক্রমসিংহে তাঁকে নিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানিয়েছেন।
‘আমি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের সামনে কথা বলছি’, শুক্রবার রাতে জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিক্রমসিংহে এ কথা বলেছেন। তিন বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী আছি এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাব।’
দেশটির অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাভিরা তাঁর নেতার বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী অভ্যূত্থান’ হিসেবে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, বিক্রমসিংহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট তাঁকে বরখাস্ত করতে পারেন না।’
মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রৈথা সেনারত্নে বিবিসিকে বলেছেন, বিক্রমসিংহে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বিগত রাজাপক্ষে সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং রাজাপক্ষের সঙ্গে বিরোধের আগে তাঁদের মধ্যে বেশ মিত্রতা ছিল।
বিক্রমসিংহে ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিরিসেনার বিজয়ে সহযোগিতা করেন। কিন্তু সরকার গঠনের পর মন্ত্রিসভায় ভারতকে একটি বন্দর ভাড়া দেওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়।
শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ চলাকালে এবং রাজাপক্ষের আমলের ‘স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের’ বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) ক্ষমতায় আসে।
২০০৯ সালে রাজাপক্ষে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে সক্ষম হন। তবে এ নিয়ে বহু সমালোচনা রয়েছে। গৃহযুদ্ধ থামাতে শেষ সময়ের দিকে কয়েক মাসে সরকারি বাহিনী হাজার হাজার বেসামরিক তামিল নাগরিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২৬ বছর ধরে চলা দ্বন্দ্বে উভয় পক্ষ মিলে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে বলে জানা যায়।
যুক্তরাজ্যের এশিয়া প্যাসিফিকবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এক টুইট বার্তায় সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে সব দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কলম্বোয় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সবাইকে সহিংসতা এড়িয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায় অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার সংবিধান মতে, দেশটিতে ফরাসি সরকার পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।