অশ্রু ঝরানো ভালোবাসা
ছয় বছর বয়সী কেলির শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধে। আরো ছোটবেলায় অসুখটি ধরা পড়লে চিকিৎসকরা কেলিকে প্রায় সুস্থ করে ফেলেন। কিন্তু চিকিৎসকরা একটা শঙ্কার কথা বলে রেখেছিলেন। অসুখটি আবারও ফিরে আসতে পারে। কেলির বাবা টম অ্যাটওয়াটার মেয়েকে এ অবস্থায় দেখতে রাজি নন। কেলির সুন্দর ভবিষ্যত দেখতে চান এই ব্রিটিশ।
কিন্তু এর জন্য চিকিৎসার খরচ পড়বে অনেক। এবার অ্যাটওয়াটার ছুটলেন চারিদিকে। গণমাধ্যমের সাহায্য নিয়েও কেলির জন্য তহবিল যোগার করতে লাগলেন তিনি।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা মিরর জানিয়েছে, এই মিররের সাহায্য নিয়ে মানুষের কাছে কেলির তহবিলের জন্য অর্থ সাহায্য চেয়েছিলেন অ্যাটওয়াটার। মিররের অনলাইন অংশে অ্যাটওয়াটারের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। যা দেখে চোখ ভিজে যায় শত শত ব্রিটিশের।
পাঁচ লাখ পাউন্ড জোগাড় হয়ে গেল। অথচ গতকাল মঙ্গলবার মাত্র ৩২ বছর বয়সে অ্যাটওয়াটার নিজেই মারা গেলেন। কারণ তিনি নিজেই ছিলেন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। তাঁর নিজেরই হাতে সময় ছিল কম। কিন্তু হাসিমুখে কেলির জন্য ছুটেছেন এদিক-ওদিক। কেবল একটাই জেদ। কেলি অবশ্যই ভবিষ্যতে সুস্থ হয়ে বাঁচবে। ছোট্ট কেলিকে অ্যাটওয়াটার বারবার সাহস দিতেন এই বলে, ‘কখনো হাল ছাড়বে না।’
কেলি আর তার মা জোয়েলিকে (২৮) কাঁদিয়ে ব্রেইন টিউমারের কাছে হার মানলেন অ্যাটওয়াটার। ২০১২ সালে টিউমার ধরা পড়ে। যতক্ষণ না কেলি সুস্থ না হয় এর আগ পর্যন্ত মরতে চাননি অ্যাটওয়াটার। অথচ কেলির প্রকৃত বাবা কিন্তু অ্যাটওয়াটার নন। ছোট্ট শিশু কেলিকে দত্তক নিয়েছিলেন অ্যাটওয়াটার দম্পতি।
জোয়েলি বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে সুখীতম সময়টা অ্যাটওয়াটার দিয়েছিল। আমার শোকটা এখন ভাষায় বলার মতো না। আমি জানতাম একদিন তাঁকে হারাবো কিন্তু সেটা যে এত তাড়াতাড়ি তা জানতাম না।’ তিনি আরো বলেন, ‘কেলির দিনগুলো এখন কষ্টে যাবে। কেলিকে তার বাবার মেয়ে বলে ডাকা যায়। এমনই ছিল ওদের সম্পর্ক।’
জোয়েলি বলেন, ‘টম (অ্যাটওয়াটার) তো আমার নায়ক। কেলির প্রতি নিজের ভালোবাসাকে পুঁজি করে তহবিল সংগ্রহ করত দারুণভাবে। আর তাঁর এ কাজ দেখে সবাই খুব বিস্মিত হতো। প্রতিদিনই সকাল হলে বেরিয়ে পড়ত।’
এ বছরই মে মাসে ফ্লেচার নামে এক পুত্র সন্তানের বাবা ও মা হয়েছেন অ্যাটওয়াটার ও জোয়েলি। জোয়েলি বলেন, ‘ফ্লেচার জন্মের পর কেলি ছিল উচ্ছসিত। আর টম তা দেখে বলেছিল, এবার আমার পরিবার পূর্ণ হলো।’
জোয়েলি বলেন, ‘টম মাঝে মাঝে বলত, আমার কষ্ট হয় আমি আমার শিশুদের বেড়ে ওঠা দেখব না। কিন্তু জেনে রেখ তা দেখার জন্য আমি আমার সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’