হাতঘড়ির দাম ছয় কোটি ৩২ লাখ টাকা!
হীরা বা এমন কোনো দামি পাথর খোদাই নেই। সাদামাটা কয়েক কাঁটার হাতঘড়ি। এমন ঘড়ির দাম কত হতে পারে? কেউ বলবেন হাজার খানেক। আর ব্র্যান্ডের হলে কয়েক হাজার, খুব বেশি হলে লাখ। কিন্তু কোটি নিশ্চয়ই কারো কল্পনায়ই আসবে না। দাম অনুমান করাই বৃথা। কারণ এমন ঘড়ির দাম কয়েক কোটিও হতে পারে। সুইজারল্যান্ডের একটি নামকরা ঘড়ি নির্মাতা দামি পাথর ছাড়াই তৈরি এক ঘড়ির দাম চাচ্ছে আট লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা বংলাদেশি মুদ্রায় ছয় কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৬২১ টাকা।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি নির্মাতা গ্রুবেল ফরসের তৈরি ‘কোয়ার্ডরুপল ট্যুরবিলিয়ন’ নামক ঘড়ি নিয়ে কথা হচ্ছে। চারটি মডেলের এই ঘড়ি এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটি ঘড়ি চারটি কাঁটার। বছরে মাত্র পাঁচ ছয়টি ‘কোয়ার্ডরুপল ট্যুরবিলিয়ন’ তৈরি করে গ্রুবেল ফরসে। তাই ঘড়ির দামও হয় আকাশচুম্বী। এরপরও এটি ঘড়ির সংগ্রাহকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।
একটি ‘কোয়ার্ডরুপল ট্যুরবিলিয়ন’ ঘড়ির দাম দিয়ে কেনা যায় ১০০ টি ‘রোলেক্স সাবমেরিন হাতঘড়ি’। আর ‘ক্যাসিনো জি-স্টক’ হাতঘড়ি কেনা যাবে ১০ হাজার। আবার ঘড়ির দাম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে পাঁচ কক্ষের একটি বাড়িও কেনা যাবে।
‘কোয়ার্ডরুপল ট্যুরবিলিয়ন’ হাতঘড়ির অস্বাভাবিক দামের কারণ হিসেবে ঘড়ি নির্মাতা গ্রুবেল ফরসের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিফেন ফরসে বলেন, এই ঘড়িতে প্রয়োগ করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রকৌশলবিদ্যা। দুটি কাঁটার স্থলে চারটি কাঁটা লাগানোর প্রযুক্তি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করেছেন তাঁরা। অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৈরি তাঁদের ঘড়ি অভিকর্ষজ ত্বরণের প্রভাবেও ভালো কাজ করে। সময়ের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশও এই ঘড়ির মাধ্যমে জানা যায়।
গ্রুবেল ফরসে প্রতিষ্ঠানটির মতে, ‘কোয়ার্ডরুপল ট্যুরবিলিয়ন’ হাতঘড়ি আধুনিক যন্ত্রকৌশলের এক অনন্য উদাহরণ। প্রতিটি ঘড়ির ৫৩৪টি অংশ। এই অংশগুলো ৪৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার থেকে একদম অনুবীক্ষণিক দশমিক ৩৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এমন একটি ঘড়ি তৈরি করতে পুরো এক বছরই সময় লাগে। আর গ্রুবেল প্রতিষ্ঠানটিতে শখানেক মানুষ কাজ করলেও পুরোপুরি হাতে কাজ করেন ১৮ জন। এদের তৈরি করতে কয়েক বছর সময় লেগেছে প্রতিষ্ঠানটির। তাই এমন ঘড়ি তৈরি করতে হলে আগে দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের অনেক প্রতিষ্ঠানই চার কাটার ঘড়ি তৈরি করে কিন্তু এসব ঘড়িতে দিনে সময়ের পার্থক্য ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত হয়, সেখানে ‘কোয়ার্ডরুপল ট্যুরবিলিয়ন’ হাতঘড়িতে সময়ের পার্থক্য আড়াই সেকেন্ডেরও কম।