পদার্থবিদ্যায় নোবেল জাপান-কানাডার বিজ্ঞানীর
দুই বিজ্ঞানীর কাজই ছিল পদার্থের অণু-পরমাণু নিয়ে গবেষণা। ১৯৯০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফারসন ল্যাবে দেখা হয়েছিল জাপানের গবেষক তাকাকি কাজিতা ও কানাডা আর্থার বি ম্যাকডোনাল্ডের। প্রায় আট বছরের গবেষণার পর ১৯৯৮ সালে জানতে পেরেছিলেন, পদার্থের অণুতে থাকা নিউট্রিনো কণার রূপবদলের খবর।
এরপর আরো তিন বছর সময় লেগেছিল এই তত্ত্বকথা প্রমাণে। ১৯৯৯ সালে জাপানের সুপার কামিওকাদেতে মাটির গভীরে নিউট্রিনো ডিটেক্টরে করা এক গবেষণায় এই প্রমাণ সামনে এনেছিলেন তাকাকি কাজিতা। প্রায় একই সময়ে কানাডার সদবেরি নিউট্রিনো অবজারভেটরিতে আর্থার বি ম্যাকডোনাল্ড এক পরীক্ষায় প্রায় একই রকম ফল পান। পরে তাঁরা দুজনেই বিজ্ঞান জার্নালে তাদের ফলাফলের কথা প্রকাশ করেন।
২০০১ সালে তাঁরাই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববাসীকে জানান- নিউট্রিনো কণা ভরশূন্য নয় এবং তা কক্ষপথে ঘোরার সময় রূপ বদলায়। আর এই তত্ত্ব প্রমাণের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছরের পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেলেন দুই কৃতি পদার্থবিজ্ঞানী।
মঙ্গলবার সকালে সুইডেনে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের মহাসচিব গোরান হানসন পদার্থ নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। পুরস্কার ঘোষণার পর গোরান হানসন বলেন, ‘পদার্থবিদ্যায় কেবল অণুর অন্দরমহলের খবর আবিষ্কারেই নয়। আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার দ্বার উন্মোচন করেছিল তাঁদের এই আবিষ্কার।’
নোবেল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তাঁদের গবেষণা পদার্থের গভীরে কী ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে।’
চলতি শতকের গোড়ার দিকের সেই আবিষ্কারের পর অবশ্য কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। তাকাকি কাজিতা এখন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর কসমিক রে রিসার্চের’ প্রধান। আর আর্থার ম্যাকডোনাল্ড কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান।
আজ মঙ্গলবার সকালে যখন দুই বিজ্ঞানীকে নোবেল কমিটি সুখবরটি জানায় তখন দুই বন্ধু প্রথমে একে অপরকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে গার্ডিয়ান। পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর ওই দুই বিজ্ঞানীর হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হবে।
এর আগে ২০১৪ সালে জ্বালানি সাশ্রয়ী উজ্জ্বল আলো তৈরি করতে পারে এমন নীল এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) উদ্ভাবনের জন্য গত বছর জাপানি গবেষক ইসামু আকাশাকি, হিরোশি আমানো ও সুজি নাকামুরাকে পদার্থের নোবেল দেওয়া হয়।
১৯০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০১ জন বিজ্ঞানী ও গবেষক পদার্থে নোবেল পেয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র দুজন নারী বিজ্ঞানী রয়েছেন।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গতকাল সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রের মধ্য দিয়ে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়। আজ পদার্থবিদ্যায় নোবেল ঘোষণার পর আগাশীকাল বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার শান্তি এবং ১২ অক্টোবর সোমবার অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল ১৮৯৫ সালে তাঁর উপার্জিত অর্থ মানবকল্যাণে বিভিন্ন অবদানে পুরস্কার প্রদানের জন্য একটি উইল করে যান। এরপর গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট ছয়টি শাখায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। শাখাগুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য ও শান্তি।
এরপর ১৯০১ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কার দিয়ে আসছে নোবেল কমিটি। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা ও দেওয়া হয়। আর নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে ঘোষণা করা হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।
নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।