নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ ঘোষণা!
‘আমি সোমবার মারা যাচ্ছি।’ পেশাদারি যোগাযোগের ওয়েবসাইট লিংকডইনে একটি হালনাগাদ তথ্যের মাধ্যমে এভাবেই নিজের মৃত্যুর দিন ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের এক ব্যবসায়ী। এমন ঘোষণা কোনো কৌতুক নয়, বরং এর পেছনে আছে মর্মস্পশী কাহিনী। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রিতভাবে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ লন্ডনের সাটন শহরের স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা বিষয়ক সংস্থা কেয়ারমার্কের পরিচালক সাইমন বিনার (৫৭) বেশ কিছুদিন ধরেই গুরুতর অসুস্থ। চলতি বছর জানুয়ারিতে ধরা পড়ে মোটর নিউরন ডিজিস (এমএনডি) নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এর পর থেকেই যন্ত্রণাকাতর জীবন যাপন করছেন সাইমন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজের মৃত্যুর সময় নিজেই নির্ধারণ করেছেন। সুইজারল্যান্ডের এক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু ঘটানো হবে।
এমএনটি রোগাক্রান্তের শরীরের বিভিন্ন অংশের স্নায়ু ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে পেশীতে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এই রোগাক্রান্তদের হাঁটা-চলা, কথা বলা, খাওয়া এবং শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া ধীরে ধীরে বাধাগ্রস্ত হয়।
লিংক্ড ইনের হালনাগাদে সাইমন লিখেছেন, ‘১৯ অক্টোবর-২০১৫, সোমবার আমি সুইজারল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মারা যাচ্ছি। আমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে ১৯ নভেম্বর-২০১৫। ’
সাইমন বিনার বলেন, ‘আমার এমএনডি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা মনে করেছিলেন আমি ২০১৭ বা ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাঁচতে পারি। তাঁরা ভুল করেছিলেন।’ বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিয়েই তিনি বলেন, তিনি খুশি মনেই নিজের জন্য দিন ঠিক করেছেন।
লিংকড ইনে সাইমন বিনার বলেন, ‘আমি চাই না কারো এমএনডি হোক। এর চেয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া বা কোনো মাতাল চালকের গাড়িতে চাপা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হওয়া ভালো। এমএনডি সম্পর্কে ইতিবাচক বলার মতো কিছুই নেই। তিনি জানিয়েছেন, সুইজারল্যান্ডের ইটারনাল স্পিরিট হাসপাতালে নিয়ন্ত্রিতভাবে তাঁর মৃত্যু ঘটানো হবে।
সাইমন বিনারের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংস্থা ব্রিটিশ হিউম্যানিস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু কপসন যুক্তরাজ্যে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের স্বেচ্ছামৃত্যুর সংশোধনের দাবি করেছেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, বর্তমান আইনের কারণে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবার অনেক দুখ কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়। তাই স্বেচ্ছামৃত্যুর আইন সংশোধন প্রয়োজন।