নারীদের ‘বিশেষ দিনে’ ছুটি কেন দিচ্ছে মিসরীয় এই প্রতিষ্ঠান?
নারীর পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই এক ধরনের লুকোচুরি, লজ্জা বা সংকোচ রয়েছে। তবে প্রতি মাসেই নিয়মিত এই শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন অনেক সময় তীব্র ব্যথাসহ নারীদেহে অনেক অস্বস্তি তৈরি করে। অন্য কোনো উপায় না থাকায় এই অস্বস্তি নিয়েই নারীরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে বাধ্য হন।
তবে সম্প্রতি মিসরে এই প্রথম একটি প্রতিষ্ঠান নারীদের বিশেষ এই সময়টিতে একদিন ছুটির অনুমোদন দিয়েছে। এ সময় তাঁরা বেতন থেকেও বঞ্চিত হবেন না।
কায়রোভিত্তিক ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শার্ক অ্যান্ড শৃম্প (Shark and Shrimp) বলেছে, তারা তাদের নারীকর্মীদের ঋতুকালে ছুটি দেবে এবং এর জন্য কোনো মেডিকেল প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
যুক্তরাজ্যের আন্দোলনকারীরা এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে এবং এমন নীতিমালা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান করেছে।
যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত গণমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
শার্ক অ্যান্ড শৃম্পের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান র্যানিয়া ইউসুফ বলেন, ‘ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের সময় সব নারীকর্মীই এই ঐচ্ছিক ছুটি তাঁদের পছন্দমতো নিতে পারবেন।’
‘আমরা আমাদের কর্মীদের শতভাগ বিশ্বাস করি এবং আমরা জানি, তাঁরা এই সিদ্ধান্তের ভুল ব্যবহার করবেন না। প্রথম দিকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের নারীকর্মীরা ঋতুস্রাবের বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে লজ্জাবোধ করতেন এবং বিস্মিত হতেন,’ বলেন র্যানিয়া।
এ ব্যাপারে সব ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে—এমন প্রতিশ্রতিও দেন র্যানিয়া ইউসুফ। এই নীতিমালার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সুখী উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আসলে শার্ক অ্যান্ড শৃম্প কেবল কাজের বিষয়টি গুরুত্ব দেয় না, মানবিকতার বিষয়টিও মূল্যায়ন করে।’
ঋতুস্রাবের সময় ব্যথাজনিত বিভিন্ন সমস্যা এবং অনেক নারী সংগঠন মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় ছুটি দেওয়ার ডাক দিয়েছে—এ ধরনের একটি প্রতিবেদন পড়ার পর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ নাঈম এমন সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান র্যানিয়া ইউসুফ।
তবে এই ঋতুকালীন ছুটির বিষয়টি নিয়ে কিছু মিসরীয় ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছেন। এই সিদ্ধান্তের পর আক্রমণাত্মক ও তীব্র ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য শুনতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তবে অনেকে আবার তাদের প্রশংসাও করেছে।
এই আন্দোলন শুরু হয় মিসরীয় একজন নারী সাংবাদিকের সাম্প্রতিক একটি প্রস্তাবের পর। এই দেশের নারীদের জন্য ঋতুকালীন ছুটির বিষয়টি অনুমোদন দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছেন তিনি।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, জাম্বিয়াসহ অনেক দেশে ঋতুকালীন ছুটির বিষটি স্বীকৃত। ভারতীয় কিছু প্রতিষ্ঠান এ বিষয়টি নিয়ে কিছু নীতিমালা ঘোষণা করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা ঋতুকালীন এই প্রাপ্য ছুটি না নিলে অতিরিক্ত টাকা পান।
২০১৫ সালে আফ্রিকার দেশের মধ্যে প্রথম জাম্বিয়ায় আইনগতভাবে নারীর ঋতুকালীন ছুটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
১৯৪৭ সালে জাপানে এই নীতিমালার অনুমোদন হয়। আইনে বলা হয়, কোনো নারীর ঋতুকালীন ব্যথা হলে বা কাজের সময় ব্যথা অনুভব করলে কাজ বন্ধ করে বিরতি নিতে পারবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ঋতুকালীন ছুটির বিষয়টি অনুমোদন পায় ২০০১ সালে। তবে এটি লিঙ্গবৈষম্যমূলক বিষয় মনে করে পুরুষরা এই নীতিমালার বিরোধিতা করেন।
তবে ইতালি এই নীতিমালা গ্রহণ করতে চাইলেও এটি অকার্যকর হয়।
ফ্রি পিরিয়ড ক্যাম্পেইন তৈরি করা ১৯ বছর বয়সী ছাত্রী এমিকা জর্জ ঋতুকালীন ছুটিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা খুব ভালো হবে। সরকার যদি বোঝে প্রতি মাসে নারীরা কিসের মধ্য দিয়ে যায়, তাহলে ভালো। এতে অন্যান্য দেশও এই পথে চলতে পারবে।’
‘আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেখানে ঋতুস্রাবের বিষয়টি লজ্জাজনক ও অস্বস্তিকর বিষয় মনে করা হয়। তবে কর্মক্ষেত্রে ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা এই ট্যাবু বা ধারণাকে ভাঙতে সাহায্য করবে। এটা কোনো অস্বস্তি বা লজ্জার বিষয় নয়,’ বলেন তিনি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, যুক্তরাজ্যে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়তো ‘একটু অবাস্তব’। তবে ‘একদিন’-এর এই ছুটি নীতিমালায় যুক্ত করাই যায়।