ধর্ষণের শিকার পুরুষদের জন্য হাসপাতালে জরুরি বিভাগ !
ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার পুরুষদের জন্য জরুরি বিভাগ চালু করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে সুইডেনের একটি হাসপাতাল। গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী স্টকহোমের এক হাসপাতালে এই বিভাগ খোলা হয়। এর মাধ্যমে সুইডেন লিঙ্গ সমতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে মনে করেন অনেকে।
স্টকহোমের সদারকইকিউসেত এলাকার হাসপাতালে প্রতিবছর ৬০০-৭০০ ধর্ষণের শিকার নারীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন থেকে বিশেষ জরুরি বিভাগে পুরুষদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
সুইডিস কর্তৃপক্ষের মতে, ‘আমরা এর প্রয়োজন অনুভব করেছি কারণ ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েও অনেকে হাসপাতালে আসেন। তবে অনেকেই লজ্জার কারণে বিষয়টি চেপে যান।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপাতালে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার পুরুষের জন্য জরুরি বিভাগ শুরু করতে দুই লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে।
স্টকহোমের হাসপাতালে জরুরি বিভাগ খোলায় বড় ভূমিকা পালন করেছে দেশটির লিবারেল পার্টি। দলটির মুখপাত্র রাসমাস জনলুন্ড বলেন, আমরা এর প্রয়োজন অনুভব করেছি। পুরুষরাও ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
অনেকের মতে, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার পুরুষদের জন্য জরুরি বিভাগ খোলার মতো উদ্যোগ সুইডেনের জন্য খুবই স্বাভাবিক। এর আগে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার লিঙ্গ বিষয়ে প্রচলিত গৎবাঁধা ধারণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আর পাঁচ বছর আগে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ সুইডেনকে বিশ্বের সবচেয়ে লিঙ্গ সমতার দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। আর চলতি বছর সুইডেনের কোনো লিঙ্গই বোঝায় না এমন সর্বনাম প্রচলন করা হয়েছে- ‘he’ বা ‘she’ এর পরিবর্তে ‘hen’।
অপরাধ দমনবিষয়ক সুইডেনের জাতীয় পরিষদ এসএনসিসিপি জানিয়েছে, গত বছর দেশটিতে পুরুষ বা অল্পবয়সী যুবক ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন ৩৭০টি ঘটনা জানা গেছে। তবে এটি সঠিক সংখ্যা নয় বলেই মনে করেন তাঁরা। সংস্থাটির মতে, অনেকেই লজ্জার ভয়ে এমন ঘটনা চেপে গেছেন।
ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমাবিশ্বে পুরুষ বা যুবক ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। তাই অন্য কোনো দেশেও ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার পুরুষের জন্য জরুরি বিভাগ খোলা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশটিতে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ৪০ হাজার অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩৮ শতাংশ অভিযোগই করেছিল পুরুষ। পূর্ববর্তী সমীক্ষার চেয়ে যা ১৪ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০১২ সালে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনে সংজ্ঞাতেই পরিবর্তন আনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো। আগে ধর্ষণ বলতে জোরপূর্বক কোনো নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। আর ওই সময় পরিবর্তনে ‘নারী’ কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা সিডিসির মতে, দেশটির ৪৪ শতাংশ নারী ও ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনে শিকার পুরুষদের জন্য জরুরি বিভাগ চালু করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে সুইডেনের একটি হাসপাতাল।