পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্ষমতা বাড়ল শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর
শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে বিপুল ক্ষমতা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনা। মৌলবাদী মুসলিম সংগঠন কর্তৃক সহিংসতার ব্যাপারে গোয়েন্দাদের আগাম সতর্কবার্তা সত্ত্বেও প্রশাসন সাম্প্রতিক বোমা হামলা ঠেকাতে না পারার দায়ে সেনাবাহিনীকে ওই ক্ষমতা দেওয়া হয়।
টাইমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার থেকেই সেনাবাহিনী ওই বিপুল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এর আওতায় সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারবে এ বাহিনী।
দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে সেনাবাহিনীর এ ক্ষমতা ছিল। পরে ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হলে ওই ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
গত রোববার ওই হামলার পর থেকে শ্রীলঙ্কায় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার পর কারফিউও জারি করা হয়। এ ছাড়া গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জানান, রোববারের ওই হামলার ঘটনায় দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জরুরি ক্ষমতা অর্পণের ব্যাপারে তিনি প্রতিজ্ঞ।
এদিকে রোববারের হামলার পর গতকাল সোমবারও আক্রান্ত এক গির্জার পাশে একটি গাড়ির কাছে তিনটি বোমা চিহ্নিত করা হয়। পুলিশ নিষ্ক্রিয় করতে গেলে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়। ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া রাজধানীর প্রধান বাস ডিপোর কাছে বেশ কিছু বিস্ফোরক পাওয়া যায়। আগের দিনের হামলার সঙ্গে সেসবের সংযোগ আছে কি না, সে ব্যাপারে বলতে কর্তৃপক্ষ অপারগতা জানায়।
জাতিসংঘ, পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, তিনি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সহযোগিতার ব্যাপারে জানিয়েছেন।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানায়, ওই ঘটনা তদন্তে তারা সহায়তা করছে।
শ্রীলঙ্কায় রোববার হওয়া ওই বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বর্তমানে ৩১০। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের সবাই শ্রীলঙ্কান।
গত রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকায় গির্জা ও হোটেলে সব মিলিয়ে আটটি বিস্ফোরণ ঘটে। ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা গির্জায় থাকা অবস্থায় বিস্ফোরণগুলো ঘটে।
দেশটির পর্যটনমন্ত্রী জন আমারতুঙ্গা জানান, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৯ বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, পর্তুগাল ও যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলায় নিজেদের নাগরিক নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে। নিহতদের পরিচয় একে একে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
গির্জা ও হোটেলে ওই হামলার ঘটনায় আজ শ্রীলঙ্কায় জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। বোমা হামলায় নিহতদের আজ সমাধিস্থ করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় তিন মিনিটের নীরবতার মধ্য দিয়ে মরদেহ সমাধিস্থ করার কাজ শুরু হয়।
শ্রীলঙ্কার পশ্চিম প্রদেশের নেগম্বো, পূর্ব প্রদেশের বাট্টিকালো এবং রাজধানী কলম্বোর গির্জাগুলোতে বোমা হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া কলম্বোর তিনটি পাঁচতারকা হোটেল সাংরি-লা, কিংসবুরি, সিনামন গ্র্যান্ডসহ আরেকটি আবাসিক হোটেলে হামলা হয়।
সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় স্থানীয় মুসলিম সংগঠন ন্যাশনাল তৌহিদ জামাতকে (এনটিজে) দায়ী করছে শ্রীলঙ্কার সরকার। গতকাল সোমবার শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র রাজিথা সেনারত্নে বলেন, ‘সরকার বিশ্বাস করে ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত (এনটিজে) এ হামলায় নেপথ্যে রয়েছে।’
শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে আরো বলেছেন, ‘স্থানীয় সংগঠনটির কোনো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি না যে দেশের এমন একটি ছোট সংগঠন একাই এতবড় হামলা চালাতে পারে।’
রাজিথা সেনারত্নে আরো বলেন, ‘আমরা এখন তদন্ত করে দেখছি, তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার বিষয়গুলো খোঁজা হচ্ছে। তারা কীভাবে দেশে আত্মঘাতী হামলাকারী পেল এবং এই বোমাগুলোই বা কোথায় পেল।’
এদিকে প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনাও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের যোগাযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ অন্যদিকে স্থানীয় সংগঠনের জড়িত থাকার ব্যাপারে কিছু তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল একটি ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা’ স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্কবার্তা দেয়। তবে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাটি কোন দেশের, তা জানা যায়নি।