আইএসের নির্যাতন থেকে বাঁচতে নারীদের আত্মহত্যা!
তারস্বরে বেজে উঠল টেলিফোনটা। দ্রুত ফোনটা ধরলেন ইরাকের সাবেক সংসদ সদস্য আমিনা আঈদ হাসান। ওপাশ থেকে ভাঙা, ভয় পাওয়া কণ্ঠে কোনোমতে শোনা গেল, ‘হ্যালো’। খুব ধীরে হলেও বক্তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। তিনি বললেন, ‘আমাদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না।’
যে নারী টেলিফোনটি করেছেন তিনি রয়েছেন ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধাদের বন্দিশালায়। সেখান থেকে হয়তো খুব সাহস নিয়ে, লুকিয়ে ফোন করেছেন আমিনাকে। কিন্তু এই নারীর মতো সাহসী সবাই হয় না। পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে নিজেকেই শেষ করে দেয় তারা।
সম্প্রতি আইএসের বন্দিশালায় অনেক নারী আত্মহত্যা করছেন বলে জানা গেছে। ক্রমাগত ধর্ষণ, যন্ত্রণা আর দফায় দফায় বিক্রির হাত থেকে বাঁচতে এটাই সবচেয়ে সহজ মনে হয়েছে তাদের কাছে।
প্রতিদিনই আমিনাকে এ রকম বেশ কিছু টেলিফোনের উত্তর দিতে হয়। কারণ সাবেক এই সংসদ সদস্য এখন আইএসের বন্দিশালায় থাকা ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নারীদের মুক্ত করার মিশনে নেমেছেন। এসব নারীর সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করে তাদের পালিয়ে আসতে সহায়তা করেন তিনি।
যখন ইরাকের মসুল শহর আইএস যোদ্ধারা দখল করে নিল, তখন আমিনা ভেবেছিলেন, শিঞ্জর পাহাড়ের ইয়াজিদিরা অন্তত বেঁচে যাবে। ‘কারণ তারা কেনে শিঞ্জরে আসবে? এখানে না তেল আছে না অন্যকিছু আছে। তো কী নিতে আসবে তারা?’ বললেন আমিনা।
বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমিনার ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধারা শিঞ্জরে এসেছিল। সেখানে হয়তো তাদের প্রয়োজনীয় তেল ছিল না। কিন্তু ছিল অন্য সম্প্রদায়ের আরেক সম্পদ, আর তা হলো মানুষ। আইএস যোদ্ধারা হাজারো ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুকে অপহরণ করল। নির্বিচারে হত্যা করল পুরুষদের। আইএসের দাবি, পবিত্র কোরআনেই নাকি ভিন্নধর্মী নারীদের বন্দি ও ধর্ষণের অনুমতি দেওয়া আছে।
ইরাকের ছোট্ট একটি সম্প্রদায় ইয়াজিদি, যারা বিশ্বাস করে একেশ্বরবাদে। তারা বিশ্বাস করে সেই ঈশ্বর পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন এবং ময়ূর ফেরেশতার কাছে সেই পৃথিবীকে যত্ন করে রাখতে দিয়েছেন। তবে আইএসের দাবি, ইয়াজিদিরা শয়তানের পূজারি।
এ রকম পরিস্থিতিতে স্বামী খলিলকে সঙ্গে নিয়ে অপহৃত নারীদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করে চলেছেন আমিনা। তিনি এসব মেয়ের ফোন ধরেন, তাঁদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন আর তাঁর স্বামী ইরাক-সিরিয়ার সীমান্ত থেকে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে ওই সব মেয়েকে মুক্ত করে আনেন। নিজে একজন ইয়াজিদি হিসেবে এসব নারীর কষ্ট খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারেন আমিনা।
এখন পর্যন্ত এই দম্পতি একশরও বেশি মানুষকে মুক্ত করে এনেছেন। এদের দাস হিসেবে বিক্রি করেছিল আইএস। কাউকে কাউকে যৌনদাসী হিসেবে বারবার বিক্রি করা হয়েছে।
আমিনা জানান, আইএসের হাতে বন্দি নারীদের বারবার ধর্ষণ করা হয়, দফায় দফায় যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে যায় যে, এই মেয়েরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। আর এই সংখ্যা বাড়ছে। কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হলে এসব নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়? এসব ভেবে রাতে ঘুমাতে পারেন না বলেও জানান আমিনা। তাই আইএসের বন্দিদশা থেকে যত বেশি সম্ভব নারীকে মুক্ত করতে চান তিনি। সে লক্ষ্যেই এখন কাজ করে যাচ্ছেন আমিনা।