প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখেও প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে অনড় হংকং
১০ লাখেরও বেশি মানুষের বিক্ষোভের পরও পিছু না হটে হংকং প্রশাসন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ বিল পাস করা হবে। প্রশাসনের এমন ঘোষণার পর থেকে হংকংয়ের পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে রেখেছে দাঙ্গা পুলিশ।
প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে চীন সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে হংকংয়ের রাস্তায় বিক্ষোভ করছে লাখো ছাত্র-জনতা। এক দশকের মধ্যে এটিই হংকংয়ে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু হলেও একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পেপার স্প্রে ছুড়ে।
গত বছরের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত বিলটি তৈরি করা হয়। হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় গর্ভবতী বান্ধবীকে খুন করে হংকংয়ে ফিরে আসে ওই ব্যক্তিকে তাইওয়ানে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ বিলটি পাশ হলে এরকম পরিস্থিতিতে সন্দেহভাজন অপরাধীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে। কিন্তু হংকংয়ের সাধারণ জনগণ সন্দেহ করছেন, চীন এই আইনের সুবিধা নিয়ে হংকংবাসীর ওপর খবরদারি বাড়াতে পারে। এভাবেই বিষয়টি হংকংয়ে এ মুহূর্তে একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
হংকংয়ে সাধারণ জনতার বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট নয়া রাজনৈতিক সঙ্কটে চাপের মুখে পড়েছেন অঞ্চলটির প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম ও তাঁর বেইজিংয়ে থাকা পৃষ্ঠপোষকরা। ল্যামকে পদত্যাগ করতে বলছেন প্রবীণ আইনপ্রণেতারা।
গতকাল রোববার থেকে শুরু হয় প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ। হংকং প্রশাসনের পক্ষে থাকা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, আইনজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, গণতন্ত্রকামী ও ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী এই প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিলের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা বলছেন, বিলটি পাশ হলে হংকংয়ের স্বায়ত্বশাসন হুমকির মুখে পড়বে। এ ছাড়া চীনের মানবাধিকার সুরক্ষাবিষয়ক আইনের দুর্বলতার কারণে সেখানে কোনো বন্দিকে ফেরত পাঠানোকে নিরাপদ মনে করছেন না তাইওয়ান ও হংকংয়ের সাধারণ মানুষ।
Hundreds of thousands of Hongkongers poured into the streets on Sunday in one of the biggest unified demonstrations the city has seen in more than a decade. pic.twitter.com/UEvXxYJ4Mp
— SCMP News (@SCMPNews) June 9, 2019
বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজকদের দাবি, এবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা ২০০৩ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরো জোরদার করতে সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা জনতার সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। সেবার পাঁচ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছিল।
অবশ্য পুলিশ বলছে, দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছে বিক্ষোভে।
হংকংয় প্রশাসনের মুখ্য সচিব ম্যাথু চিয়াং আজ সোমবার জানিয়েছেন, জনগণের দাবি মাথায় রেখের প্রস্তাবিত বিলটি সংশোধন করা হয়েছে।
আগামী বুধবার পরিমার্জিত বিলটি পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য তোলা হবে জানিয়ে ম্যাথু বলেন, ‘আশা করি, আইনসভায় সবাই বিষয়টি নিয়ে সবাই খোলাখুলি, শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিকভাবে কথা বলবেন।’
হংকংয়ের বিক্ষোভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি তাইওয়ান জানিয়েছে, সন্দেহভাজন খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। এর কারণ হিসেবে তাইওয়ানের বক্তব্য, সন্দেহভাজন কোনো অপরাধীকে প্রত্যর্পণের এমন উদাহরণ সৃষ্টি হলে, চীন ভবিষ্যতে এর ফায়দা ওঠাতে পারে।
হংকং চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে চীন প্রশাসন ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংকে ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।