হংকংয়ে ২০ লাখ মানুষের বিক্ষোভ, প্রশাসকের পদত্যাগ দাবি
বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল স্থায়ীভাবে বাতিলের দাবিতে হংকংয়ে কয়েক লাখ মানুষের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে সোমবার বলা হয়েছে, প্রায় ২০ লাখ মানুষ মিছিল করে হংকং গভর্নর হাউসের কাছে পৌঁছে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে।
যদিও বিতর্কিত বিলটি আপাতত স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার পরও বিক্ষোভকারীরা হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যামের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ দুই দাবিতে রোববার সন্ধ্যার পরও মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
হংকংয়ের রাজপথে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের হটাতে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, রাবার বুলেটও ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে আন্দোলন চলাকালে আহত হয়েছেন ৮০ জনের বেশি, যার মধ্যে ২২ পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এত কিছুর পরও থেমে থাকেননি হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীরা।
এরপর শনিবার হংকং সরকারের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল স্থগিতের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে ক্যারি ল্যাম হুঁশিয়ারি দেন বিভেদ সৃষ্টি না করতে এবং সহিংসতা পরিহারের। তিনি বলেন, ‘বিলটি ঘিরে সমাজে যে বিভাজন-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটা আমরা চাইনি। হংকংয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে এই বিল নিয়ে আপাতত থেমে, আরো একবার ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।’
ক্যারি ল্যামের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে চীনের হংকং ও ম্যাকাওবিষয়ক কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলেছেন, হংকং সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সম্মান দিয়ে বিলটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়েছে।
এরপর রোববার ফের হাজারো বিক্ষোভকারীর আন্দোলনে উত্তাল হয় হংকংয়ের রাজপথ। তাঁরা বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল স্থায়ীভাবে বাতিলের দাবি জানান। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন পোস্টার ও স্লোগান দিতে দিতে আন্দোলন করছেন। কারো পোস্টারে লেখা আছে, ‘আমরা হংকংবাসী, আমাদের গুলি করবেন না।’
বিক্ষোভকারী এক যুবক বলেন, ‘আমি চাই বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল স্থায়ীভাবে বাতিল হোক। সাময়িকভাবে স্থগিত করলে সমস্যার সমাধান হয় না।’
অন্যদিকে, কালো পোশাক পরে অন্তত ১০ হাজার বিক্ষোভকারী হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যামের পদত্যাগ দাবি করছেন।
বৃদ্ধ এক নারী বলেন, ‘দেখুন, আমরা ভীষণ দুঃখ পেয়েছি। আমি হংকংয়ে জন্ম নিয়েছি, বেড়ে উঠেছি। যখন দেখি, চীন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আইন করছে আর তাতে সহযোগিতা করছে আমাদের কোনো নেতা। আমরা চাই, ক্যারি ল্যাম পদত্যাগ করুক।’
এদিকে, আন্দোলনে আহতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ফুল দিয়েছে হংকংবাসী।
১৯৯৭ সালে ব্রিটেন চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তর করে। তখন থেকেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে হংকংয়ের অধিবাসীরা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি এক দেশে দুই ব্যবস্থাপনার নীতি পাল্টে গণতন্ত্রপন্থীদের দমন করতে চাইছে বেইজিং।