মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিসর
আদালতে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে মিসর। মুরসির মৃত্যুর ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনায় নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত চেয়েছে।
মুরসির মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে কাতার। আর তুরস্ক মুরসির মৃত্যুতে মিসরের শাসকদের দায়ী করে তাঁকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
৬৭ বছর বয়সী মুরসি স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার আদালতে মারা যান। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাঁদের খবরে বলে, ২০১৩ সালে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারাবন্দি করা হয়। মুরসির মৃত্যুর ঘটনার ‘নিরপেক্ষ, বিস্তারিত ও স্বচ্ছ তদন্ত’ চেয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাঁদের অফিশিয়াল টুইটারে লেখে, ‘আমরা মুরসির মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ, বিস্তারিত ও স্বচ্ছ তদন্ত চাই। দীর্ঘ সময় ধরে একাকী বন্দি রাখা, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং পরিবারের লোকজন, আইনজীবী ও পৃথিবী থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন রাখারও তদন্ত চাই।’
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক সারাহ লিহ হুইটসন এক টুইটে বলেছেন, ‘মুরসির মৃত্যু ভয়ানক, তবে তা অনুমেয় ছিল।’ পরে এক বিবৃতিতে তিনি এ মৃত্যুর জন্য সরকারের উপেক্ষা, দীর্ঘ সময় ধরে একাকী বন্দি রাখা, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং পরিবারের লোকজন ও আইনজীবীদের দেখা করতে না দেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।
সংগঠনটি কারাগারজুড়ে বন্দিদের ব্যাপক হারে উপেক্ষা করাসহ মিসরে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত চেয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রায় ছয় বছরের একাকী বন্দিজীবনে মুরসিকে মাত্র তিনবার তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেখতে যেতে পেরেছেন। আইনজীবী ও চিকিৎসককেও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হতো না।
পরিবার ও সমর্থকরা আটকের পর থেকেই মুরসির শারীরিক অবস্থা এবং বেশির ভাগ সময় একাকী বন্দি রাখার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল।
জানা গেছে, স্থানীয় সময় আজ ভোরে তাঁকে কায়রোর কাছে সমাহিত করা হয়। সেই সময় তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মুরসির ছেলে আবদুল্লাহ মোহামেদ মুরসি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, মিসরের কর্তৃপক্ষ পরিবারের ইচ্ছে অনুসারে মুরসিকে নিজ শহরে প্রকাশ্যে জানাজা করে সমাহিত করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
মিসরের এই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব নিষিদ্ধ ইসলামি গ্রুপ মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ছিলেন। ২০১২ সালে দেশটিতে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। তবে শাসনের এক বছরের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় সামরিক ক্যুর মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দি করা হয়। ওই সময়ের সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি ২০১৪ সালে থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন।
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাঁর সমর্থকসহ ভিন্নমত পোষণকারীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এ সংখ্যা লাখ লাখ বলে জানা গেছে।
মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির মৃত্যুতে মিসরের শাসকদের দায়ী করেছেন।