বন্যার কবলে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল; নিহত বাড়ছে
টানা মৌসুমি ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যা এবং ভূমিধসে বাংলাদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও নেপালে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা।
নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরো ২৯ জন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গতকাল রোববার নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন তথ্য জানায়।
গত বৃহস্পতিবার থেকে হিমালয়কন্যা নেপালে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় রাজধানী কাঠমান্ডুসহ মাহোত্তারি, বিরাটনগর, ললিতপুর, কাবেরি, কোটাং, ভোজপুর ও মাকানপুরে বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় এসব প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার রাতেই মারা যান ১৫ জন। এদিকে, কাঠমান্ডুর বিভিন্ন সড়কও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকা থেকে অনেককে উদ্ধার করা হয়েছে।
ভারতের আসাম রাজ্যের ৩৩টি জেলার মধ্যে ২৫টিই বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দুই হাজার গ্রামের মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও এর শাখাগুলোর পানি বাড়তে থাকায় প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ অঞ্চলে আরো বেশ কিছুদিন ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আসামে ১০ জনসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধসে ১৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নেপালের পূর্বাংশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কোসি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সেখানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এদিকে, টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ত্রাণ সংকটের কারণে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন এসব জেলার বন্যাকবলিত মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় বন্ধ রয়েছে পাঠদান কার্যক্রম। রাস্তায় পানি ওঠায় অনেক জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন জেলায় নদনদীর পানি বাড়ছে। প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।
এ ছাড়া ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারে ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েক লাখ শরণার্থী। ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে এরই মধ্যে ক্যাম্প এলাকায় কয়েকজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কক্সবাজার, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এমন বন্যার পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ঝড়, বন্যা ও ভূমিধসে এ অঞ্চলে এক হাজার দুইশর বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী বন্যায় তলিয়ে যায় ভারতের কেরালা রাজ্য।