পুলিশের গুলিতে হংকং বিক্ষোভ তুঙ্গে
হংকংয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ অন্য মাত্রা পায় গতকাল রোববার। গত জুনে শুরু হওয়া বিক্ষোভে প্রথমবারের মতো গুলি চালিয়েছে পুলিশ। তবে গুলিতে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, লাঠি হাতে পুলিশকে তাড়া করা আন্দোলনকারীদের দিকে বন্দুক তাক করে আছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ছাড়া রোববারের বিক্ষোভে প্রথমবারের মতো জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। হংকংয়ের সুয়েন ওয়ান এলাকা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়ে সিম শা সুই এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
একটি বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে প্রায় তিন মাস ধরে আন্দোলন করছেন সরকারবিরোধীরা। সরকার ও বিক্ষোভকারী উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হংকংয়ে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখে বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলটি হংকং প্রশাসন স্থগিত করলেও আন্দোলনকারীদের দাবি, বিলটি স্থায়ীভাবে বাতিল করতে হবে এবং হংকংয়ের নেতা ক্যারি ল্যামকে পদত্যাগ করতে হবে। এর পাশাপাশি দাবিতে যুক্ত হয়েছে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের কথিত হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত। গতকাল রোববার থেকে বিক্ষোভের তীব্রতা আরো বেড়ে গেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে পুলিশ দাবি করে, বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করতেই গুলি ছুড়া হয়েছিল। এ ছাড়া সংঘর্ষে আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছে। তবে গুলিটি কোথায় করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি হংকংয়ের পুলিশ প্রধান লিয়াং কয়োক-উইং।
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলাকালীন একজন বৃদ্ধকে হাঁটু গেড়ে বসে পুলিশকে গুলি না করার অনুরোধ জানাতে দেখা যায়।
রোববার সংঘর্ষ শুরুর আগে পুলিশেকে লক্ষ্য করে ইট ও পেট্রলবোমাসহ নানান বস্তু ছুড়ে মারেন কালো পোশাক পরিহিত বিক্ষোভকারীরা।
পুলিশও বিক্ষোভকারীদের দিকে পাল্টা রাবার বুলেটের গুলি ও টিয়ার গ্যাস শেল ছুড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের দেওয়া ব্যারিকেড সরিয়ে দিতে এবং তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে দুটি জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, গাড়ি দিয়ে সুয়েন ওয়ানের রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা এবং রাস্তা খুঁড়ে ইট তুলছেন।
পুলিশকেও জলকামান ও নজরদারি ক্যামেরাযুক্ত গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। অবশ্য পুলিশ দাবি করে—‘বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেই কেবল জলকামান ব্যবহার করা হবে।’
চলতি মাসের শুরুতে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করে বলেছিল, জলকামানের ব্যবহারে বিক্ষোভকারীরা আহত হতে পারেন। এতে করে চলমান উত্তেজনা আরো বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে রোববার হংকং পুলিশের পরিবারের কয়েকশ সদস্য এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করে চলমান সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানায়। গণতন্ত্রকামীদের সমাবেশে পুলিশ হামলা চালায় বলে বরাবরই অভিযোগ করে আসছে আন্দোলনকারীরা।
গতকাল রোববারের সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় ধরে আপাতদৃষ্টিতে শান্ত থাকার পর নতুন করে হংকংয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলো।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে হংকং ইস্যুতে ধৈর্য হারাচ্ছে চীন। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সাবেক শীর্ষ নেতা ডেং সিয়াওপিং দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘হংকংয়ে দাঙ্গা লাগলে তাতে হস্তক্ষেপ করা চীন সরকারের অধিকারই নয়, দায়িত্বও।’