বোমা দিয়ে গড়া যে গ্রাম! (ভিডিওসহ)
বোমার ওপর লাগানো হয়েছে গাছ। গাছগুলো দেখতে সবুজ ও বেশ তরতাজা। বোমার স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে কাঠের তৈরি ঘর। আর লম্বা লম্বা বোমা ভাসছে পানিতে, নৌকা হয়ে। যাত্রীরা নদী পারাপার করছেন এতে বসে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওসের গ্রামে গেলে এসব দৃশ্য দেখা যাবে। বোমা ব্যবহৃত হচ্ছে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজে। তবে তরতাজা বোমা নয়, সবই পরিত্যক্ত বোমা। আর সংখ্যায় এসব বোমা এত বেশি যে লাওসের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন এগুলো আর মাঠে ফেলে না রেখে কেটেকুটে কাজে লাগাচ্ছে!
লাওসের গ্রামে ঘুরে এমন ছবি তুলেছেন মার্ক ওয়াটসন। তিনি নিউজিল্যান্ডের লিটেলটন শহরের বাসিন্দা, একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার। লাওসের খামুয়ান প্রদেশ থেকে এসব ছবি তোলেন মার্ক। এশিয়ার একটি সাইকেল ভ্রমণে অংশগ্রহণ করেছিলেন মার্ক। এই সাইকেল ভ্রমণ চীন থেকে শুরু হয় এবং ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছায়। সফর শেষ করতে নয় মাস সময় লাগে। ইরানি গণমাধ্যম পার্স টুডের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মার্ক বলেন, ‘আমি চীন, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় সাইকেলে ভ্রমণ করেছি।’
কিন্তু মার্ক যখন লাওসের খামুয়ান প্রদেশে প্রবেশ করেন, তখন কিছু জিনিস দেখে তিনি প্রচণ্ড অবাক হন। তিনি দেখতে পান, লাওসের বিভিন্ন গ্রামে টব, বাড়ির স্তম্ভ ও নৌকা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পরিত্যক্ত বোমা বা বোমার খণ্ডাংশ। এমনকি গবাদি পশুর গলার মালা হিসেবেও বোমার টুকরো ব্যবহৃত হচ্ছে।
মার্ক বলেন, ‘আমার মনে কৌতূহল তৈরি হয়, কেন গ্রামের সর্বত্র বোমার অংশবিশেষ পড়ে আছে? কেন বিভিন্ন জায়গায় বোমার খোসা, ব্যবহৃত মাইনের সিলিন্ডার, ব্যবহৃত বোমার অবশিষ্টাংশ পড়ে আছে?’
১৯৬৪ থেকে ১৯৭৩ সাল—এই নয় বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃষ্টির মতো বোমা ফেলেছে লাওসের মাটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান থেকে ওই নয় বছরে লাওসে বোমা পড়েছে ২০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে অনেক বোমা রয়ে গেছে অবিস্ফোরিত। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসব বোমা এখন পরিত্যক্ত। আয়তন অনুযায়ী পৃথিবীর ইতিহাসে যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা হলো লাওস।
বর্তমানে অবশ্য লাওস সরকার বোমামুক্ত দেশ গড়তে গ্রাম ও শহরগুলো থেকে এসব বোমা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে পরিমাণ বোমা পড়ে আছে, তাতে গোটা লাওসকে বোমামুক্ত করতে ১০০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। তত দিন লাওসের মানুষকে যুদ্ধের এ ধ্বংসাত্মক স্মৃতির সঙ্গেই জীবন কাটাতে হবে।
লাওস কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ থেকে বেশি দূরে নয়। বাংলাদেশের ঠিক দক্ষিণ-পূর্বের প্রতিবেশী মিয়ানমারের পূর্বের দেশটিই লাওস।