‘পদত্যাগ করছি না’, বললেন হংকং নেতা
চীনশাসিত হংকংয়ের প্রশাসনিক প্রধান ক্যারি ল্যাম বেইজিংয়ের কাছে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে চীন সরকারও তাঁর পদত্যাগ নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ল্যাম।
তবে গতকাল সোমবার ফাঁস হওয়া এক অডিও রেকর্ডে ল্যামকে বলতে শোনা যায়, তিনি সম্ভব হলে পদত্যাগ করবেন। সেখানে তিনি হংকংয়ের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য নিজেকে দায়ী করছিলেন। একে অমার্জনীয় বলছিলেন ক্যারি ল্যাম। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্যারি ল্যাম জানালেন, চীন সরকারের কাছে পদত্যাগ করছেন না তিনি।
টানা কয়েক মাস ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়াদের একটি বড় অংশ ক্যারি ল্যামের পদত্যাগ চেয়ে আসছেন। তবে গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা অডিও রেকর্ডের সত্যতা জানতে চাওয়া হলে ল্যাম জানান, ব্যক্তিগত পর্যায়ের কথার অডিও রেকর্ড করে তা গণমাধ্যমের হাতে ছেড়ে দেওয়াটা ‘একদমই অগ্রহণযোগ্য’।
ওই অডিও রেকর্ডে হংকং নেত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘যদি আমার সুযোগ থাকত, আমি পদত্যাগ করতাম। প্রথমে আমি ক্ষমা চাইতাম, তারপর পদত্যাগ করতাম।’
ক্যারি ল্যাম জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের চলমান অশান্তির ইতি টানতে যত ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, নেবে তাঁর সরকার।
বিতর্কিত একটি প্রত্যর্পণ বিলকে ঘিরে হংকংয়ে দানা বাঁধে সরকারবিরোধী আন্দোলন। ওই প্রত্যর্পণ বিলে হংকং থেকে যেকোনো অভিযুক্ত সন্দেহভাজনকে চীনের আদালতে বিচারের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা হয়। একদিকে হংকংকে স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যদিকে এমন বিল পাস করানোর অপচেষ্টাকে হংকংয়ের ওপর কমিউনিস্ট পার্টিশাসিত চীনা সরকারের আরো বেশি দমন-পীড়নের হাতিয়ার মনে করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে হংকংবাসী। তীব্র আন্দোলনের মুখে বিলটি সাময়িকভাবে স্থগিত করে হংকং সরকার।
বৃহত্তর পরিসরে গণতন্ত্র দাবি করে ১৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে হংকংয়ের এই আন্দোলন। চলতি বছরের ১ অক্টোবর চীন গণপ্রজাতন্ত্রের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনের আগেই হংকংয়ের এই আন্দোলন থামাতে চায় চীন সরকার।
অবশ্য চীন বরাবরই হংকং বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কথা অস্বীকার করে আসছে। এ ছাড়া চলমান বিক্ষোভে বিদেশি মদদের অভিযোগও তুলেছে চীন। হংকং-সংক্রান্ত ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করে চীন।
এ ছাড়া এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়া হংকংয়ের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে বিক্ষোভকে দায়ী করে চীন।
এ অবস্থায় অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে চলমান সংঘাতপূর্ণ অবস্থানের কোনো সুরাহা না হলে হংকংয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে অঞ্চলটির প্রশাসন। তবে জরুরি অবস্থা জারি হলে গণগ্রেপ্তার, নিষেধাজ্ঞা ও কারফিউ জারির মতো ক্ষমতা আরো বাড়বে হংকং প্রশাসনের—এমনটা আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।