রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মুখে হংকং প্রশাসনের নতিস্বীকার
টানা কয়েক মাস বিক্ষোভ ও রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর একটি বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন হংকংয়ের প্রশাসনিক প্রধান ক্যারি ল্যাম। আন্দোলনকারীদের প্রবল চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে হলো চীনশাসিত হংকং প্রশাসনকে।
চলতি বছরের এপ্রিলে হংকং পার্লামেন্টে একটি প্রত্যর্পণ বিল আনে সরকার। ওই বিল অনুযায়ী, চীন চাইলে হংকংয়ের কোনো বাসিন্দাকে নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গিয়ে বিচার করতে পারবে। অর্থাৎ, হংকংয়ের বাসিন্দাদের নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার একটি আইনি পথ বের করার চেষ্টা করছিল চীন।
বিলটি পাস হলে আইনি সুযোগ নিয়ে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক কর্মীদের চীন নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গিয়ে কমিউনিস্ট বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে নির্যাতন ও হয়রানি করতে পারে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়। একদিকে হংকংকে স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যদিকে এমন বিল পাস করানোর অপচেষ্টাকে হংকংয়ের ওপর কমিউনিস্ট পার্টিশাসিত চীনা সরকারের আরো বেশি দমন-পীড়নের হাতিয়ার মনে করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে হংকংবাসী। টানা পাঁচ মাস কার্যত হংকং কার্যত অচল করে দেন সেখানকার বাসিন্দারা। আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহার করতে হবে এবং বিক্ষোভে পুলিশের নৃশংসতার অভিযোগের বিচার। প্রবল আন্দোলনে চাপের মুখে জুন মাসে বিলটি স্থগিত করে হংকং সরকার।
কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতেও দমেনি। এরই মধ্যে বিক্ষোভে পুলিশি হস্তক্ষেপের জেরে আন্দোলনের মাত্রা তীব্রতর হয়। ক্লাস বয়কট করে আন্দোলনে যোগ দেয় স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবশেষে চাপের মুখে বিলটি প্রত্যাহার করল হংকং সরকার।
বৃহত্তর পরিসরে গণতন্ত্র দাবি করে ১৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে হংকংয়ের এই আন্দোলন। চলতি বছরের ১ অক্টোবর চীন গণপ্রজাতন্ত্রের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনের আগেই হংকংয়ের এই আন্দোলন থামাতে চায় চীন সরকার।
অবশ্য চীন বরাবরই হংকং বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কথা অস্বীকার করে আসছে। এ ছাড়া চলমান বিক্ষোভে বিদেশি মদদের অভিযোগও তুলেছে চীন। হংকং-সংক্রান্ত ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করে চীন।
এ ছাড়া এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়া হংকংয়ের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে বিক্ষোভকে দায়ী করে চীন।