নূর চৌধুরীর ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হলো বাংলাদেশের
বঙ্গবন্ধুর খুনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা নূর চৌধুরীর কানাডায় অবস্থান-সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুর করেছেন দেশটির আদালত।
কানাডার ফেডারেল আদালত গতকাল বুধবার এ বিষয়ে তাঁর রায়ে জানান, নূর চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়ে বাংলাদেশের করা আবেদন যৌক্তিক এবং এ বিষয়ে তথ্য দিলে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে না।
আদালতের এ রায়ের ফলে কানাডা সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নূর চৌধুরীর অবস্থানের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ সরকার। দ্য কানাডিয়ান প্রেসের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
নূর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে কানাডায় দর্শনার্থী (ভিজিটর) স্ট্যাটাস মঞ্জুর করা হয়। পরে তাঁরা শরণার্থী হিসেবে সুরক্ষার (রিফিউজি প্রটেকশন) আবেদন করেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের একজন হিসেবে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের আদালত ফেরারি হিসেবে নূর চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন।
আদালতের রায়ে আরো বলা হয়, গুরুতর অরাজনৈতিক অপরাধের দায়ে ২০০২ সালে নূর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী ‘রিফিউজি প্রটেকশন’ থেকে বাদ পড়েন। এর পর ২০০৬ সালে গুরুতর অপরাধের দায়ে তাঁরা কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন। নূর চৌধুরী ২০০৯ সালে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের’ (পিআরআরএ) জন্য অনুরোধ করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি দেখান, বাংলাদেশে ফিরলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে।
কানাডায় নূর চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ ২০১০ সাল থেকে কানাডার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। পিআরআরএ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার ব্যাপারেও উদ্বেগ জানায় বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে বাংলাদেশের হাইকমিশনার কানাডার নাগরিকত্ব, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে জনস্বার্থে নূর চৌধুরীর কানাডায় অভিবাসন ও পিআরআরএ আবেদনের কী অবস্থা, তা জানানোর অনুরোধ করে একটি চিঠি লেখেন।
কিন্তু বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে তথ্যবিনিময়ের কোনো চুক্তি নেই জানিয়ে কানাডার নাগরিকত্ব, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী বাংলাদেশের হাইকমিশনারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নূর চৌধুরীর পিআরআরএ আবেদনের কী অবস্থা, তা জানতে বাংলাদেশ বিষয়টির বিচারিক পর্যালোচনার (জুডিশিয়াল রিভিউ) আবেদন করে।
জবাবে কানাডার মন্ত্রী ও নূর চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের অনুরোধ ‘প্রিম্যাচিউর’ এবং এটি বিচারযোগ্য নয়।
কিন্তু ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস ও’রেইলি তাঁর রায়ে নূর চৌধুরী ও কানাডার মন্ত্রীর ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বিচারক তাঁর রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘আমার মতে, বিচারিক পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশের করা আবেদন মঞ্জুর করা উচিত। কারণ যে তথ্য জানতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, তা জানতে দিলে জনস্বার্থ সংরক্ষিত হবে। মন্ত্রী এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
বিচারক আরো জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নূর চৌধুরী সম্পর্কে তথ্য জানতে পারলে বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ চাইতে পারবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এ ধরনের তথ্য দিলে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরালো হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ মনে করে, অপরাধীদের স্বাধীনভাবে থাকার সুযোগ না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে তা কানাডা ও বাংলাদেশ—দুই দেশের জনগণের জন্যই ভালো হবে।