ফিনল্যান্ডের শিশুরা কেন বাক্সে ঘুমায়?
ফিনল্যান্ডের শিশুরা কার্ডবোর্ডের বাক্সে ঘুমায়! আর তারা না কি এটা উপভোগও করে। অন্তত তাদের মা-বাবাদের এটাই দাবি।
ছোট ছোট শিশুরা কার্ডবোর্ডের বাক্সে ঘুমাচ্ছে -এটা অন্য দেশের মায়েদের কাছে শুনতে অদ্ভুত শোনালেও ফিনল্যান্ডের জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি শিশুদের জীবন বাঁচাতেও সহায়তা করে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলছেন, যাতে করে শিশুমৃত্যুর হার কমে যায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির শিক্ষার্থী কারিমা লাধানি জানান, ফিনল্যান্ডের সাফল্যের পর দক্ষিণ আফ্রিকা, জাম্বিয়া, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে এ নিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনি সম্প্রতি ‘বরকত বান্ডেল’ নামে দক্ষিণ এশিয়ার মায়েদের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাও খুলেছেন।
কার্ডবোর্ডের বাক্স কি অন্য দেশের শিশুদেরও জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে?
কারিমা মনে করেন, হ্যাঁ করবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এই ফলাফলের ওপর ভৌগলিক সীমারেখা কোনো প্রভাব ফেলবে। তবে জনগোষ্ঠীর চাহিদা ভেদে এর নকশায় ভিন্নতা আসতে পারে।’
ওয়াশিংটর পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিনল্যান্ডের বেবি বক্সের আদলে তৈরি বাক্স ব্যবহার করে আগামী পাঁচ বছরে ৫৮ হাজার নবজাতকের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। ‘বরকত বান্ডেল’ নামের এই অলাভজনক প্রকল্পে একটি মাত্র শর্ত থাকবে, আর সেটি হচ্ছে যেসব মায় এই সুবিধা গ্রহণ করতে চাইবেন তাঁদের সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে একটি মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। যা ফিনল্যান্ডে ২০ শতক থেকে হয়ে আসছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আসছে বছরগুলোতে অন্তত তিন হাজার মায়ের জীবন বাঁচানো সম্ভব। এই বাক্সগুলো বিনা মূল্যে দেওয়া হবে বা সুলভমূলে বিক্রি করা হবে।
বেবিবক্স ব্যবহারের যেসব সুবিধা রয়েছে সেগুলো হলো : এটি সহজে বহনযোগ্য, শিশুর মা-বাবার শোবার ঘরে বা বিছানায় অল্প জায়গা দখল করে, শিশু এখানে অনায়াসে ঘুমাতে পারে।
ফিনল্যান্ডে শিশুদের মধ্যে এই বাক্সগুলো বিনা মূল্যেই বিতরণ করা হয়। তবে এগুলো শুধু কার্ডবোর্ডের বাক্স হয় না। এতে নতুন মা-বাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ যেমন টুপি, শীত পোশাক, স্লিপিং ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিস থাকে।
ফিনল্যান্ডে বেবি বক্সের প্রভাব :
১৯৩৮ সাল থেকে ফিনল্যান্ডে এই বাক্সের প্রচলন শুরু হয়। মূলত সে সময় দরিদ্র মা-বাবারাই তাঁদের সদ্যজাত সন্তানের জন্য এই বাক্স ব্যবহার করতেন। দেখা গেল এতে শিশুমৃত্যুর হার কমতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই ফিনল্যান্ডের সরকারের পক্ষ থেকে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে এর ব্যবহার শুরু করা হয়।
যখন বেবিবক্সের প্রচলন শুরু হয় তখন ফিনল্যান্ডের ১০ শতাংশ শিশু তাদের প্রথম জন্মদিন পালন করার আগেই মারা যেত। এখন এই হার এসে দাঁড়িয়েছে ০.৩ শতাংশে।
সাধারণত জন্মের পর তিন থেকে চার মাস ফিনল্যান্ডের শিশুরা এই বাক্সে ঘুমায়। যখন শিশু নড়াচড়া করে বাক্সের দেওয়ালে ধাক্কা দিতে শুরু করে তখনই তাকে বাক্স থেকে বের করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রেও বেবিবক্সের ব্যবহার বাড়ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই বাক্সের ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। কারিমার সংস্থা যে বাক্সগুলো সরবরাহ করে সেগুলোতে নতুন মায়েদের জন্য বুকের দুধের বিভিন্ন উপকারিতার কথা লেখা থাকে। তা ছাড়া শিশুর জন্মের পর পরই যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন তাও সংযুক্ত থাকে। ফলে উন্নয়নশীল দেশের জন্য এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন কারিমা।