বিশ্বের কাছে কোন ভয়াবহ মহামারির তথ্য লুকাচ্ছে উ. কোরিয়া?
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে একবার সোয়াইন ফিভারের (শূকরের ভাইরাসঘটিত মহামারি রোগ) প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গিয়েছিল। যদিও এশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি দেশে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে শূকরের সংক্রামক এই ব্যাধি। ধারণা করা হচ্ছে, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে উদ্ভূত সোয়াইন ফিভারের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের খবর লুকিয়ে রেখেছে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের কড়া শাসনের মধ্যে থাকা দেশটি।
চলতি মাসে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় অন্তত পাঁচটি মৃত বুনো শুয়োর পাওয়া গেছে। রক্ত পরীক্ষায় এসব প্রাণীর দেহে ভাইরাসজনিত রোগটির জীবাণু পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। মৃত শূকরগুলোর চার কিলোমিটারব্যাপী বিচরণক্ষেত্রের মধ্যে থাকা অন্যান্য প্রাণীও এই রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক হিসাব অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ায় লাগামহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সোয়াইন ফিভার। আর উত্তর কোরিয়া থেকে আশপাশের দেশগুলোতেও মারণব্যাধিটি ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে যে স্থানে মৃত বুনো শুয়োর পাওয়া গেছে, তার চারপাশের আড়াইশ কিলোমিটার এলাকায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করার অভিযান চালাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় গত মাসে এক ডজনেরও বেশি শূকরের ফার্মে ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে দেশটির জাতীয় অ্যাসেমব্লির গোয়েন্দা কমিটির প্রধান দাবি করছেন, সোয়াইন ফিভার ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উত্তর কোরিয়ায়। আর দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য উত্তর পিয়ংগান থেকে সব শূকর সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
প্যারিসভিত্তিক বিশ্ব পশু স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ওআইই) গত ৩০ মে দেওয়া এক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পিয়ংইয়ংয়ের ২৬০ কিলোমিটার উত্তরে চীনের সীমান্তবর্তী এলাকার একটি ফার্মে সোয়াইন ফিভারে ২২টি শূকর মারা গেছে।
কিন্তু ওই প্রতিবেদন দাখিলের পর ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে আর কোনো তথ্য ওআইইকে জানায়নি উত্তর কোরিয়া। এমনকি দেশটির গণমাধ্যমেও এ নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য নেই।
এ ছাড়া জাতিসংঘের কাছেও ওআইইর প্রতিবেদন ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় সোয়াইন ফিভার সংক্রমণের আর কোনো তথ্য নেই। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় সোয়াইন ফিভারের প্রাদুর্ভাবের খবরাখবর জানতে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে উত্তর কোরিয়ায় যে হারে শূকর এই ভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে করে দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।