আইএসের অর্থের উৎস কী?
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। নৃশংসতায় অনেক আগেই সংগঠনটি পূর্বসূরি আল-কায়েদাকে ছাড়িয়ে গেছে। আইএস মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক হলেও বর্তমানে ওই এলাকার বাইরেও হামলা চালাচ্ছে তারা। অতি সম্প্রতি এই জঙ্গিগোষ্ঠী ফ্রান্সে কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়ে ১২৯ জনকে হত্যা করেছে। ওই হামলায় ৩০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। প্রশ্ন হলো, এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠার অর্থ কোথায় পাচ্ছে আইএস?
আইএসের আয়ের উৎস নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আলোকে আইএসের অর্থের উৎসগুলো তুলে ধরা হলো :
অনুদান
আইএস সৃষ্টির শুরুর দিকে অর্থ দিয়ে সংগঠনটিকে সহায়তা করেছে অনেক দাতব্য সংস্থা ও ধনী ব্যক্তি। তাঁরা ছিলেন মূলত সুন্নি সম্প্রদায়ের। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই মূলত এই অনুদানগুলো করা হয়েছিল। অনুদানের এসব অর্থ ব্যবহার করে আইএসের শুরুটা হলেও ধীরে ধীরে সংগঠনটি স্বনির্ভর হয়ে ওঠে।
তেল বিক্রি
ইরাক ও সিরিয়ার দখলকৃত এলাকার অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে বিপুল অর্থ জোগাড় করেছে আইএস। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৪ সালে আইএসের তেল বিক্রি থেকে আয় ছিল ১০ কোটি মার্কিন ডলার। তুরস্ক ও ইরাকে তেল চোরাচালান করে আইএস। সম্প্রতি বোমা হামলায় আইএস দখলকৃত অঞ্চলের অনেক তেলক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই এই খাত থেকে আইএসের আয় কমে গেছে।
অপহরণ-বাণিজ্য
অপহরণ ও পরে মুক্তিপণ আদায়—এ বাণিজ্য থেকেও অর্থ জোগাড় করেছে আইএস। ২০১৪ সালে এই খাত থেকে দুই কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়। পক্ষত্যাগী এক সাবেক আইএস যোদ্ধা বলেন, অপহরণ-বাণিজ্যের জন্য আইএসের আলাদা বিভাগই আছে।
লুটতরাজ ও চাঁদাবাজি
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, দখলকৃত এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আইএস। এই খাত থেকে তাদের লাখ লাখ মার্কিন ডলার আয় হয়। শুধু এলাকার বাসিন্দাই নয়, ওই এলাকায় ব্যবসা করতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকেও আইএস চাঁদা তোলে। চাঁদাবাজি ছাড়াও ব্যাংক লুট, পশু চুরি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিক্রি থেকেও ভালো অর্থ আয় করে আইএস।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কর
দখলকৃত এলাকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‘যিযিরা’ নামে বিশেষ কর আরোপ করেছে আইএস। সংখ্যালঘুরা এই কর দিতে বাধ্য করে আইএসকে। কর ছাড়া কোনো সংখ্যালঘু আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় থাকলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে আইএস।
দাস ব্যবসা
দাস ব্যবসা থেকেও আয় করে আইএস। জঙ্গিগোষ্ঠীটি মেয়েদের অপহরণ করে দাস হিসেবে বিক্রি করে। ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের তথ্যের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ইরাকের সিনজার শহর দখল করে কয়েক হাজার ইয়াজিদি নারীকে বন্দি করে আইএস। পরে তাদের দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়।