আইএস উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বাবা ভাঙ্গা!
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব যে জুজুর ভয়ে বেশ তটস্থ হয়ে থাকে তার নাম ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বলা হয়ে থাকে, আইএস হলো সবচেয়ে বড় জঙ্গি সংগঠন। হামলা, নৃশংসতা আর শক্তির কারণে গত দুই বছরে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে এরা। বিশেষ করে ২০১৪ সালে মসুল হামলার পর বৃহৎ আকারে নজরে আসে আইএস।
তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো, একদিন যে আইএসের অভূতপূর্ব উত্থান ঘটবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল প্রায় এক দশক আগেই! আর যিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনি হলেন বুলগেরিয়ার একজন রহস্যময় নারী। অন্ধ এ নারী বাবা ভাঙ্গা নামে পরিচিত। শুধু কি তাই? যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা, সুনামির আঘাত এবং বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়েও অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনি।
বিশ্বের মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়ে বাবা ভাঙ্গা বলেছিলেন, ইউরোপে হানা দেবে মুসলমানরা। হবে ‘মহা মুসলিম যুদ্ধ’। আর ২০৪৩ সালে ইসলামিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। রোম হবে ইসলামিক খেলাফতের উপকেন্দ্র।
ঠিক এই মুহূর্তে ইসলামিক স্টেট এর কর্মকাণ্ড, শক্তি প্রদর্শন ও আর দখলের ঘটনাগুলোকে বাবা ভাঙ্গার সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গেই মেলানো হচ্ছে। ফলে ‘মহা মুসলিম যুদ্ধ’ হওয়ার আশঙ্কাও রয়ে যাচ্ছে।
কে এই বাবা ভাঙ্গা?
বুলগেরিয়ার ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভায় জন্ম নেন বাবা ভাঙ্গা। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত অন্য সবার মতো সাধারণ জীবনযাপন করেন তিনি। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত তথ্য থেকে জানা যায়, এরপর একটি বিরাট ঝড় বা টর্নেডোতে রহস্যজনকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন বাবা ভাঙ্গা।
বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে যেসব গল্প প্রচলিত আছে সেখানে বলা হয়, ঝড় বা টর্নেডোর বেশ কয়েকদিন পর তাঁকে খুঁজে পায় পরিবারের সদস্যরা। তবে সে সময় তার চোখের পাতা পুরোপুরি লাগানো ছিল এবং তার ওপরে ছিল ধুলো আর ময়লার পুরু আস্তরণ। এই ঘটনার পর থেকে তাঁকে মানুষের রোগ সারানোর এবং ভবিষ্যৎ বলে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাবা ভাঙ্গা।
ধীরে ধীরে বাবা ভাঙ্গার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির বেশ কয়েকজন নেতার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে কয়েকজন নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে বাবা ভাঙ্গাকে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
তবে বাবা ভাঙ্গার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে যে তিনি বুলগেরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন গোপন তথ্য সংগ্রহ করেন এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষকে সেসব তথ্য ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে জানিয়ে বিভ্রান্ত করতেন।
বাবা ভাঙ্গার বিখ্যাত সব ভবিষ্যদ্বাণী
৫০ বছরের পেশাজীবনে শতাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বাবা ভাঙ্গা। যিনি আবার বলকানের জোতিষী হিসেবেও পরিচিত। তিনি বলেন, একধরনের অদৃশ্য প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারেন তিনি। আর এই প্রাণীরাই তাঁকে মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয়।
বাবা ভাঙ্গার অনুসারীরা জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে সুনামির আগে তিনি বলেছিলেন, ‘ঠান্ডা অঞ্চল উষ্ণ হয়ে উঠবে...এবং আগ্নেয়গিরি জাগ্রত হবে। একটা বড় ঢেউ শহর এবং মানুকে ঢেকে ফেলবে। সবকিছু পানির তলদেশে নিমজ্জিত হবে। বরফের মতো সবকিছু গলে যাবে।’
এমনকি নাইন-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী ছিল বাবা ভাঙ্গার। তিনি বলেন, ‘ভয়, ভয়! লোহার পাখির আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইয়েরা ভেঙে পড়বে। দুটি নেকড়ের গর্জনে নিরীহদের রক্ত ঝরবে।’
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট যে একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হবেন সেটিও আগে থেকেই বলেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে, তিনিই হবেন শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্বে একটি পারমাণবিক যুদ্ধ হবে। আর এর মাধ্যমে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে ইউরোপ।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এই জ্যোতিষীর বক্তব্য হচ্ছে, ২১৩০ সালের মধ্যে ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েনরা পানির নিচে সভ্যতা তৈরি করতে সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে ৩০০৫ সালে মঙ্গল গ্রহে একটি যুদ্ধ হবে বলেও বাণী দিয়েছেন তিনি।
১৯৯৬ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগে বাবা ভাঙ্গা জানান, ফ্রান্সের এক ১০ বছর বয়সী অন্ধ কিশোরী হবে তাঁর উত্তরসূরি। আর বিশ্ব খুব দ্রুতই তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবে বলেও মন্তব্য করে যান বাবা ভাঙ্গা।