এবার মালয়েশিয়ার অস্বীকৃতি, ইন্দোনেশিয়ার ধোঁয়াশা
তুরস্কসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সন্ত্রাসবিরোধী জোটকে স্বাগত জানালেও এতে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মালয়েশিয়া। জোটে থাকা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া রয়েছে ধোঁয়াশায়। আর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জানতে চেয়েছে জোটের বিস্তারিত।
গত বুধবার সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৩৪টি মুসলিম দেশ নিয়ে ‘ইসলামিক সামরিক জোট’ গঠিত হয়েছে। উপ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানিয়েছেন, এই জোট ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিসর ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করবে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর বলেছেন, আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই জোটের সদস্য দেশগুলো গোয়েন্দা তথ্য, প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি- এমনকি সৈন্যও আদান-প্রদান করবে।
মালয়েশিয়ার অস্বীকৃতি : মালয়েশিয়াকে সন্ত্রাসবিরোধী জোটভুক্ত করেছে রিয়াদ। কিন্তু মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতুক সেরি হিশাম্মুদ্দিন হুসেইন সাংবাদিকদের বলেন, কুয়ালালামপুর রিয়াদের সঙ্গে যোগ দেবে না।
ইন্দোনেশিয়ার সন্দেহ : বিশ্বের সর্ববৃহ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, সৌদি আরব সন্ত্রাসবিরোধী জোটে থাকার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এই জোটে যোগ দেওয়ার আগে এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায় তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরমানাথা নাসির বলেন, কোনো সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ইন্দোনেশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির প্রধান নিরাপত্তামন্ত্রী লোহাত পন্দজাইতান বলেন, ‘আমরা সামরিক জোটে যোগ দিতে চাই না।’
যুক্তরাষ্ট্র আরো জানতে চায় : যুক্তরাষ্ট্র এই জোটকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এই জোট কীভাবে তাদের অভিযান পরিচালনা করবে এ ব্যাপারে দেশটি বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার বলেছেন, ‘এই জোট নিয়ে সৌদি আরবের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে আমরা আরো বিস্তারিত জানতে চাই।’
বিস্তারিত জানতে চেয়েছে রাশিয়াও : সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারী আরেক দেশ রাশিয়াও রিয়াদের কাছ থেকে এই জোটের বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরভ বলেছেন, ‘আমরা এই জোট ও প্যারিস বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আশা করছি।’
গত সোমবার প্যারিসে সিরিয়া সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। আজ নিউইয়র্কে এ নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে রাশিয়া অংশ নেবে।
স্বাগত জানিয়েছে তুরস্ক : ন্যাটো জোটভুক্ত একমাত্র দেশ তুরস্ক এই জোটে যোগ দিতে রাজি হয়েছে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতুগলু গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছেন তাঁদের জন্য এই জোট খুব সহায়ক হবে। আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্কের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দাবি করেছে, ইরাক ও সিরিয়া থেকে আইএসের চোরাচালান করা তেলের প্রধান ক্রেতা হচ্ছে আঙ্কারা এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ও তাঁর পরিবার এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
ইরান, ইরাক ও সিরিয়া জোটভুক্ত নয় : ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্দেশ্য থেকে গঠিত হলেও এই জোটে ইরাক ও সিরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ইরাক এই জোটের ভূমিকা নিয়ে বিভ্রান্তি প্রকাশ করেছে। ইরাকের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসির নূরি বলেন, এই পদক্ষেপ আমাদের খুবই বিভ্রান্ত করেছে। এই অঞ্চলে কে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেবে?’