ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনেই বর্ষবরণ হয় মালয়েশিয়ায়
মালয়েশিয়ার আছে নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি। আছে নামি কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক। নেই শুধু নিজস্ব ক্যালেন্ডার।
ইংরেজি নতুন বছরই তাই মালয়েশিয়ায় নতুন বছর হিসেবে পালন করা হয়। মালায়ু, চাইনিজ, তামিল—এ তিন জাতির দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো মালায়ুরা। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনকেই তাঁরা নববর্ষের দিন হিসেবে পালন করে।
মালয়েশিয়ান ভাষায় হ্যাপি নিউ ইয়ারকে বলা হয়-‘সেলামাত তাহুন বারু’। এখানে সেলামাত অর্থ শুভ, তাহুন অর্থ বছর আর বারু অর্থ নতুন। যার পুরো অর্থ হয়-‘শুভ নববর্ষ’। পরিচিতজনকে ‘সেলামাত তাহুন বারু’ বলে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানায় মালয়েশিয়ানরা।
সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবনে বড় বড় ব্যানার টাঙানো হয় ‘সেলামাত তাহুন বারু’ লিখে। শপিংমলগুলোতে থাকে নতুন বছর উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ে বিক্রয় উৎসব। নতুন বছর উপলক্ষে মালয়েশিয়ানরা কম-বেশি সবাই নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটা করে।
বন্ধু ও আপনজনদের নতুন বছরের উপহারও দেওয়া-নেওয়া করে থাকে। ১ জানুয়ারি তাহুন বারু উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় সাধারণ ছুটি। মহা ধুমধামের সাথে উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে ‘সেলামাত তাহুন বারু’ উৎযাপন করা হয়। বিশেষ করে কুয়ালালামপুর শহরে বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা বড় বড় অনুষ্ঠান করে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে।
গান-বাজনা, নৃত্য, বাঁশি বাজানো, মুখোশ পরে, মুখ রাঙিয়ে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই একসঙ্গে উৎসব করে। ঠিক রাত ১২টায় টানা ১০-১৫ মিনিট আতশবাজি ফুটিয়ে নীল আকাশকে রঙে রঙে রাঙিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। আতশবাজি প্রদর্শনীটাই এই অনুষ্ঠানের শেষ ও প্রধান আকর্ষণ।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর ও এর আশপাশে ‘সেলামাত তাহুন বারু’র বড় বড় অনুষ্ঠান হয় দাতারান মারদেকায়, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারসংলগ্ন ১৭ একরের বিশাল পার্কে, বুকিত বিনতাং, প্রশাসনিক শহর পুত্রজায়া, সেলাংগর প্রদেশের প্রধান শহর শাহ আলাম, দামানসারা মতিয়ারা, সানওয়ে পিরামিড, মাইনস ওয়ান্ডার ল্যান্ড, আইসিটি শাহ আলম এলাকায়।
কুয়ালালামপুরের দাতারান মারদেকায় (স্বাধীনতা ময়দান) জাতীয়ভাবে সিটি করপোরেশনের (ডিবিকেএল) উদ্যোগে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় ‘সেলামাত তাহুন বারু’র অনুষ্ঠান। এটি বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। ৩১ ডিসেম্বর বিকেল থেকে এখানে ছোট-বড় নির্বিশেষে হাজার হাজার নারী-পুরুষ গান-বাজনা উপভোগ করে।
এখানে প্রতি বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ এক বা একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত থেকে দেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। ঠিক রাত ১২টায় আকাশ ছোঁয়া রং-বেরঙের আতশবাজি ফুটিয়ে নতুন বছরের নতুন আকাশ ও মন রাঙিয়ে বাড়ি ফিরে মালয়েশিয়ানরা।
টুইন টাওয়ার এলাকার আশপাশের উপস্থিত জনতা বর্ষবরণের আতশবাজি প্রদর্শনী উপভোগ করেন। যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে গোটা কুয়ালালামপুর, টুইন টাওয়ার এবং মারদেকা মাঠসংলগ্ন এলাকায় বিপুল টহল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহরের বাস ও ট্রেনগুলোকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়। মধ্যরাতে জমকালো আতশবাজির মাধ্যমে মালয়েশীয়দের পাশাপাশি হাজারো প্রবাসী নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।