চলতি সপ্তাহেই শান্তি আলোচনা চায় জাতিসংঘ
সিরিয়ায় যুদ্ধ বন্ধে চলতি সপ্তাহেই শান্তি আলোচনা শুরু করতে চায় জাতিসংঘ। তবে সিরীয় সরকার ও রাশিয়ার জোট যদি বিমান হামলা বন্ধ না করে, তাহলে আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়েছে বিরোধীরা।
এতে দীর্ঘ দুই বছর ধরে সিরিয়ায় চলা গৃহযুদ্ধ বন্ধ হওয়ার যে আশা দেখা দিয়েছিল তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বিরোধীদের মধ্যে কে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আলোচনায় প্রতিনিধিত্ব করবেন তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘের প্রতিনিধি স্ট্যাফান ডি মিসতুরা বলেছেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যেই আলোচনা শুরু করতে আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই দুই পক্ষের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে ছয় মাস আলোচনা চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলোচনার শুরুতেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করা হবে। এ বিষয়ে সম্মত হলে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হবে।
দুই বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে নিহত হয়েছেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে গৃহহীন হয়েছেন ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি মানুষ।
যুদ্ধবিরতিতে যদি দুই পক্ষই রাজি হয় তাহলে, পুরো দেশেই তা কার্যকর হবে। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়েদা নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো যুদ্ধবিরতির বাইরে থাকবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জাতিসংঘের প্রতিনিধি স্ট্যাফান।
সরকারবিরোধী একটি বিদ্রোহী গ্রুপের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যত দিন পর্যন্ত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো অবরুদ্ধ করে রাখা হবে এবং তাদের ওপর বিমান হামলা চালানো হবে তত দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের শান্তি আলোচনা শুরু করা সম্ভব নয়।
বিদ্রোহী গ্রুপ আলিয়াত সাইফ আল শামের মুখপাত্র আবু গিয়াত আল-সামি বলেন, ‘এই অবস্থায় যদি আমরা আলোচনায় অংশ নিই, তাহলে তা হবে আমাদের শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা।’
এদিকে আলোচনায় কোন কোন গ্রুপ অংশ নেবে তা দ্রুত জানানোর তাগিদ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। সেই সঙ্গে সিরিয়ার শান্তি আলোচনার জন্য নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধির প্রতি নিজের পূর্ণ সমর্থনও জানিয়েছেন তিনি।
‘শান্তি আলোচনার বিষয়টি সিরিয়ার দুই পক্ষকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তা না হলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে। পুরো বিষয়টিই এখন তাদের ওপর নির্ভর করছে। আপনি একটি ঘোড়াকে পানির কাছে নিয়ে যেতে পারবেন, তবে তাকে পানি খেতে বাধ্য করতে পারবেন না’, বললেন কেরি।
সিরিয়ায় সর্বশেষ শান্তি আলোচনা হয়েছিল ২০১৪ সালে। সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অংশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে এসব অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইএস। একপর্যায়ে এই যুদ্ধে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোও যুক্ত হয়।
২০১৪ সাল থেকেই আইএস জঙ্গিদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া প্রায় চার মাস আগে থেকে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালাতে থাকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মিত্র রাশিয়া। সিরিয়ার সেনাবাহিনীকেও বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে রাশিয়া। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আইএসের প্রবেশ এবং রাশিয়ার যুক্ত হওয়া পুরো যুদ্ধকে নতুন মোড় দিয়েছে।
এই যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং সিরিয়ায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।