১৭ তলা ভবন ধসে নিহত ৮
তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলের তাইনান শহরে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ তলা একটি ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০ দিনের একটি মেয়ে শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে ঘটা ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৪। তাইনান থেকে ৪৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভূপৃষ্ঠের ২৩ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল।
মূল ভূমিকম্পটির পর আরো বেশ কয়েকটি মৃদু কম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া ব্যুরো। এই ভূমিকম্পে কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ভূমিকম্পের পর আরো দুর্ঘটনা এড়াতে তাইনান শহরের বিদ্যুৎ ও গ্যাসসংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানায়, তাইনানের ১৭ তলা ভবনটির তলাগুলো ‘প্যানকেকের মতো’ একটির ওপর আরেকটি ভেঙে পড়েছে। এ জন্য নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে উদ্ধারকারী দল। ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে আরো অনেকে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ভূমিকম্পে তাইনানের আরো অন্তত ১৫টি ভবনের ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তাইনানের অগ্নিনির্বাপক বিভাগের কর্মকর্তা লি পো মিনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ভূমিকম্পের সময় বিধ্বস্ত ভবনের ৯৬টি অ্যাপার্টমেন্টে অন্তত ২৪০ জন বাসিন্দা ছিলেন। এ ছাড়া তাইওয়ানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চেন উই জেন জানিয়েছেন, চীনা চান্দ্রবর্ষের ছুটির কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ওই আবাসিক ভবনে অনেক বেশি লোক ছিলেন।
চেন উই জেন জানান, আটকে পড়াদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের পাশাপাশি আরো ৪০০ সেনা অংশ নিয়েছে। তাইনান শহরে আটটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শতাধিক লোক ওই সব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
তাইওয়ানের জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার মুখপাত্র লিন কুয়ান চেং জানান, প্রায় পুরোপুরি ধ্বসে যাওয়া ভবনটিতে উদ্ধারকাজ চলছে। উদ্ধারকর্মীরা হাইড্রোলিক মই ও ক্রেনের সাহায্যে অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে আটকে পড়া আহত ব্যক্তিদের টেনে বের করে আনছে। ক্রেন ও খননযন্ত্র দিয়ে কংক্রিটের দেয়ালগুলো ভাঙা হচ্ছে। এ ছাড়া উদ্ধার করে আনা মানুষদের মধ্যে অন্তত ১৪০ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেশটির প্রেসিডেন্ট মা ইং জেউ জানিয়েছেন, দুর্গতদের উদ্ধারে সব রকম চেষ্টা করবে সরকার। এ ছাড়া দুর্গতের পুনর্বাসনে সম্ভাব্য সব কিছুই করা হবে।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, তাইওয়ানে ভূমিকম্পের প্রায় একই সময়ে নেপালেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। নেপালে স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। তবে এই ভূমিকম্পে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
তাইওয়ানে এর আগেও ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। দেশটিতে ১৯৯৯ সালে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এক ভূমিকম্পে দুই হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ভূমিধসে চারজনের প্রাণহানি ঘটে।