১৫ লাখ শ্রমিক আনার খবর সত্য নয়, জানাল মালয়েশিয়া
বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিচ্ছে না মালয়েশিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের একদিনের মাথায় দেশটির পক্ষ থেকে এমন কথা জানানো হলো।
স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতো রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েম বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ শ্রমিক আনার খবরটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ের রেজিস্টার করা শ্রমিকের সংখ্যা, যারা বিশ্বব্যাপী ১৩৯টি দেশে কাজ করতে আগ্রহী।’
বিদেশে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশের মোট ১৫ লাখ মানুষ সে দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নাম নিবন্ধন করেছে বলেও জানান মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী।
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইন জানায়, আজ এক সংবাদ সম্মেলনে মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের ১৩৯টি দেশে চাকরি খুঁজছে বাংলাদেশিরা। আর এই তালিকার প্রথমদিকে আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।’
এ ছাড়া তাঁর এই সংশোধনী বাংলাদেশ থেকে আসা বা আসতে চাওয়া শ্রমিক ও চাকরিপ্রার্থীদের একটি সঠিক ধারণা দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতো রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েমের সংবাদ সম্মেলনের পর দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি এক জনসভায় বিশ্বের সব দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। ঘোষণার সময় তিনি আলাদা করে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেন।
আহমেদ জাহিদ হামিদির বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার অনলাইন জানিয়েছে, শ্রমিক নেওয়া বন্ধে মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। সিদ্ধান্ত বহাল থাকাকালে সরকার বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে দুই স্তরের কর্মসূচি পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করবে।
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশ থেকে নতুন করে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ভবনে জনশক্তি রপ্তানিবিষয়ক সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতো রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েম সই করেন।
গতকাল চুক্তি স্বাক্ষরের পর মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে অন্যান্য সোর্স কান্ট্রির মতো বাংলাদেশ থেকে সেবা, নির্মাণ, কৃষি, প্ল্যান্টেশন ও ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে কর্মী নিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত হলো। অতীতে শুধু প্ল্যান্টেশন সেক্টরে কর্মী নিয়োগের সুযোগ ছিল।
নতুন সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার কথা বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল।
আজ শুক্রবার এক জনসভায় বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি বলেন, দেশি শ্রমিক নিয়োগ দিতে নিয়োগকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে। আর অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের আটক করা হবে এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি একই সঙ্গে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। তিনি আশা করেন, মালয়েশিয়া বিশেষত, দেশটির তরুণরা সরকারের সিদ্ধান্তে সাড়া দেবেন এবং বিদেশিদের কাছে থাকা কাজগুলোতে নিজেরা অংশ নিয়ে দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধিতে অবদান রাখবেন।
এদিকে মালয়েশিয়ার বার্তা সংস্থা বারনামা জানিয়েছে, এক বৈঠকের পর দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে (জনশক্তি নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের তালিকাভুক্ত দেশ) কর্মী নেওয়া স্থগিত রাখার এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কত শ্রমিক প্রয়োজন, সে বিষয়ে সরকার সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত থাকবে।’