যুদ্ধবিরতির আগে সিরিয়ায় রাশিয়ার মরণ কামড়
গতকাল শুক্রবার রাত থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গে দেশটির বিবদমান গোষ্ঠীগুলোসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব একমত হয়েছে, এটা পুরোনো খবর। সিরিয়া সম্পর্কে সর্বশেষ খবরটি হলো, যুদ্ধবিরতির প্রাক্কালেও স্থানীয় সময় গতকাল শেষ রাতে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া বলছে, তারা আগের হামলাগুলোর ধারাবাহিকতাতেই জাতিসংঘের অনুমোদিত লক্ষ্যগুলো উদ্দেশ্য করে এ হামলা চালিয়েছে। তবে বিবিসি ও রয়টার্স জানাচ্ছে, যুদ্ধবিরতির আগে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা লক্ষ্য করে মরণ কামড় দিয়েছে রাশিয়া।
বিবিসির খবরে বলা হয়, শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে সিরিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আগেই এ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। এরপর সিরিয়ার শতাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীও দুই সপ্তাহের এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। সাময়িক এই যুদ্ধবিরতি সিরিয়া সরকার ও সরকার সমর্থিত বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য প্রযোজ্য হলেও তথাকথিত আইএস বা আল-কায়েদা সমর্থিত নুসরা ফ্রন্টের জন্য প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয়।
এদিকে, গত বুধবার সিরিয়ায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন ঘণ্টার মধ্যে পুতিন ফোনে সৌদি বাদশা সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। আলোচনায় বিশ্বনেতারা পাঁচ বছর ধরে চলমান ওই গৃহযুদ্ধের অবসান যে সামরিক উপায়ে সম্ভব নয়, এ কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
এর আগে গত সোমবার রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হয় এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তা কার্যকরের একটি খসড়া প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে। কিন্তু তার পরের দিনই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, সিরিয়া সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে আমেরিকার হাতে থাকা 'বি প্ল্যান'কে তখন কাজে লাগানো হবে। এখানে বি প্ল্যান বলতে কেরি সিরিয়ায় সামরিক হামলার কথা বলেছেন বলে ব্যাখ্যা করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই আলোচনা চলাকালে শুক্রবার দামেস্কের পূর্বাঞ্চলের ইস্টার্ন ঘোউটা, হোমস প্রদেশের উত্তরাঞ্চল ও আলেপ্পো প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে রাশিয়ার বিমানবহর হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, রাশিয়ার এসব হামলা ছিল আগের হামলাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি তীব্র। সংস্থাটির প্রধান রামি আবদেল রহমানকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ‘এগুলোর স্বাভাবিক হামলার চেয়ে তীব্র। এই হামলা দেখে মনে হয়েছে, যুদ্ধবিরতির আগেই রাশিয়া ও সিরিয়া সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে চায়।’
তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত লক্ষ্য আইএস, নুসরা ফ্রন্ট ও অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীর ওপরই হামলা চালিয়েছে। এসব গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সম্মত হলেও এই যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে অনেকেই সন্দিহান। ওবামা বলেছিলেন, সিরিয়া সরকার, রাশিয়া ও মিত্রশক্তিরা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলেই কেবল এই যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত করার জন্য আক্রমণ থামাতে হবে এবং মানবিক সহায়তা সিরিয়ায় পৌঁছাতে হবে। এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মান প্রদর্শন করবে।