হাজার দিনে ১০ হাজার মাইল হেঁটেছেন যে নারী
নারীরা নাকি নরম হয়। তারা বেশি হাঁটতে পারে না, কষ্ট করতে পারে না, পাহাড়ে উঠতে পারে না। নারীদের নিয়ে এমন সব অভিযোগ অহরহই শোনা যায়। কঠিন সব কাজই নাকি পুরুষের। তো সেই নরম-সরম নারীদেরই একজন যদি এক হাজার দিন ধরে পায়ে হেঁটে চলেন, দেশের পর দেশ পার হয়ে যান স্রেফ পায়ে হেঁটে, তাহলে তাকে কী বলবেন?
বলছি সারা মারকুইস নামে এক নারীর কথা। যিনি নিজের পায়ে হেঁটে হেঁটে পার করেছেন দুই মহাদেশ এবং ছয়টি দেশ। হেঁটেছেন ১৪ হাজার কিলোমিটার বা প্রায় ১০ হাজার মাইল! সম্পূর্ণ একা এই পথচলায় তাঁকে মোটটি আট জোড়া জুতো বদলাতে হয়েছে, এই আর কি।
এই কাজের জন্য ব্যয় হয়েছে তিন বছর সময় আর এই তিন বছরের যাত্রাপথে তিন হাজার কাপ চা খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা রেখেছেন সারা। ৪৩ বছর বয়সী সারার জন্য সুইজারল্যান্ডের জুরা পাহাড় এলাকার একটি ছোট্ট গ্রামে।
সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সারা বলেন, ‘এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আমার ভেতর থেকেই পায়ে হেঁটে দেশ দেখার ডাকটা এসেছিল। আমি খুব গভীরভাবে প্রকৃতিকে অনুভব করতে চেয়েছিলাম।’
নিজের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সারা বলেন, ছোটবেলা থেকেই ভীষণ কৌতূহলী তাঁর মন। সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ে পাহাড়ে দৌড়ে, গাছে চড়ে আর পাখি দেখে শৈশব কেটেছে তাঁর। মাত্র আট বছর বয়সে একদিন পোষা কুকুরের সঙ্গে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গিয়েছিলেন বনে। সেখানে একটি গুহায় রাত কাটান তিনি। সারা বলেন, ‘কাউকে অভিযাত্রী হয়ে উঠতে হয় না, কারণ সবাই আসলে পৃথিবীতে অভিযাত্রী।’
মানচিত্রের ওপর বসে বসে নিজের ভ্রমণের পরিকল্পনা করতেন সারা মারকুইস। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় উঠতে থাকে তাঁর পরিকল্পনাও।
এর প্রস্তুতি হিসেবে এক বছর নিউজিল্যান্ডের পাহাড়ে চড়েছেন সারা। পার করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরে ২০১০ সালে এসে দুঃসাহসিক অভিযানের পরিকল্পনা ঠিক করে ফেললেন তিনি।
তিন বছরের অভিযাত্রায় সারা গিয়েছেন সাইবেরিয়া, গোবি মরুভূমি, চীন, লাওস ও থাইল্যান্ডে। এরপর একটি কার্গো জাহাজ ভাড়া করেন তিনি। সেটিতে করে ব্রিসবেন গিয়ে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন পুরো অস্ট্রেলিয়া। তিন বছর পরে মরুভূমির একটি গাছের নিচে এসে এ যাত্রা ক্ষান্ত দেন সারা। প্রায় এক দশক আগে এই গাছটি তিনি প্রথম দেখেছিলেন।
এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় সবচেয়ে কঠিন ছিল রোজকার খাবার জোগাড়ের কাজটি। এ বিষয়ে সারা বলেন, ‘সৃষ্টির শুরুর মানুষ যেভাবে বাস করত, আমি সেখানে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। ফিরতে চেয়েছিলাম ৬০ হাজার বছর আগে। তখনই আমি টের পেলাম পরিমাণমতো খাবার খুঁজে পাওয়া কতটা কঠিন কাজ। খাবার জোগাড়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাবতে বসে আমি বুঝতে পারলাম পুরো পৃথিবীর মানুষের জন্য খাদ্যের জোগান দেওয়া কতটা কঠিন।’
তিন বছরের অভিযাত্রায় খাবারের সন্ধান করাটাই ছিল সারার জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের কাজ। সেই সঙ্গে নিজেকে নিরাপদ রাখাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল থাকায় সব বাধা দূর করে এগিয়ে যেতে পেরেছেন সারা। কী করতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়েই প্রতিটি পদক্ষেপ ঠিক করেছেন তিনি।