কী ছিল খুররামের শেষ স্ট্যাটাসে?
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খান লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হওয়া নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হলেন পাকিস্তানের ব্লগার এবং মানবাধিকারকর্মী খুররাম জাকি।
তাঁর মৃত্যুর পর পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন তাঁর শেষ স্ট্যাটাস নিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে। মৃত্যুর তিন ঘণ্টা আগে দেওয়া স্ট্যাটাসে খুররাম জাকি লন্ডনের নবচির্বাচিত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মেয়র সাদিক খানকে নিয়ে লিখেছিলেন।
সেখানে জাকি লেখেন, ‘সাদিক খান পাকিস্তানি নন। তিনি একজন ব্রিটিশ। তাঁর উন্নতি ও সাফল্যের কৃতিত্ব তাঁর নিজের কঠোর পরিশ্রম এবং সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া ব্রিটিশ ব্যবস্থার ওপর যায়। তাঁর উল্কাসদৃশ উত্থানে পাকিস্তান বা ইসলামের কোনো কৃতিত্ব নেই এবং তিনি প্রমাণ করেছেন ব্রিটিশ মুসলিম ও অন্য ধর্মের যাঁরা দেশটির ব্যবস্থাকে পক্ষপাতদুষ্ট এবং বৈষম্যমূলক বলেন তাঁরা আসলে অলস এবং মিথ্যাবাদী।’
ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের ভয়ের এই সময়ে সাদিক খানকে মেয়র নির্বাচিত করে লন্ডন বিশ্বের সামনে একটি সভ্য মানব সভ্যতার উদাহরণ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে বলে ব্যাখ্যা করেন খুররাম জাকি। তিনি লেখেন, ‘আমি পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের প্রশংসা করি। নিজের শেষ স্ট্যাটাসে জাকি প্রশ্ন রেখেছিলেন, আমরা কি একজন আহমাদি বা হিন্দু বা খ্রিস্টানকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারব? এটা না হয় বাদই দিলাম। আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শহরের (করাচি) গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত মেয়রের জাতিগত পরিচয়ের কারণে তার কাছ থেকে আমাদের আইনি অধিকার এবং সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়েছি।’
তিনি আরো লেখেন, ‘এটা নির্বুদ্ধিতা ও লজ্জাজনক যে, আমরা আমাদের মালালা আর শারমিনের মতো সাফল্যগুলোকে অসম্মান করি।’
ডন জানিয়েছে, খুররাম জাকি ‘লেট আস বিল্ড পাকিস্তান’ বা এলইউবিপি নামের একটি রাজনৈতিক ব্লগিং ওয়েবসাইটের সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিক ব্লগিং ওয়েবসাইট এলইউবিপির সম্পাদক সাদিক খানের ফেসবুক পেজের উদ্দেশ্য হিসেবে লেখা আছে, সাইটটি ‘উদার ধর্মীয় মতামত প্রচার করে এবং যেকোনো ধরনের উগ্রপন্থার বিরোধী’।
তবে শুধু উগ্রপন্থীই নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে তাঁর ওয়েবসাইটে পাকিস্তানের উদারপন্থী ‘নিষ্ক্রিয়’ বুদ্ধিজীবীদেরও কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। এসব অভিযোগে সম্প্রতি পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ তাঁর এই ব্লগ পাকিস্তানে ব্লক করে দিয়েছে বলে ডনের খবরে উল্লেখ করা হয়।
খুররাম জাকি বহুদিন ধরেই পাকিস্তানে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছিলেন। তিনি এবং তাঁর বন্ধু জিবরান নাসির সম্প্রতি লাল মসজিদের মাওলানা আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মাওলানা আজিজ শিয়াদের বিরুদ্ধে নিয়মিত উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং এই অভিযোগের সপক্ষে তাঁরা একটি ভিডিওচিত্রও দাখিল করেন।
কিন্তু স্থানীয় পুলিশ ওই মামলা নিতে রাজি হয়নি। পরে জাকি এবং তাঁর বন্ধু এই বিষয়ে নিম্ন আদালতের শরণাপন্ন হন। কিন্তু নিন্ম আদালতেও জাকির এই আবেদন রাখা হয়নি। বরং জাকি ও তাঁর সঙ্গীদের এই মামলা করার এখতিয়ার নেই- এই বলে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। জাকি এবং তার সঙ্গীরা এরপর হাইকোর্টে আবেদন করলেও গত ২৯ মার্চ ইসলামাবাদ হাইকোর্ট একই যুক্তি দেখিয়ে তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেন।
অন্যদিকে মাওলানা আবদুল আজিজ জাকি এবং তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন যে, তাঁরা মাওলানা এবং লাল মসজিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এর আগে খুররাম জাকি ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারের স্কুলে হত্যাকাণ্ডের প্রথম বার্ষিকীতে লাল মসজিদের সামনে সরকারি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় জাকিকে তাঁর স্ত্রী ও ১৬ বছর বয়সী মেয়েসহ আটক করেছিল পাকিস্তান পুলিশ।