১১১ গাছ লাগিয়ে কন্যাশিশুর আবাহন
ধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে ভারত। বিবিসি নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র নিয়েও হৈচৈ কম হয়নি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সেই ভারতেরই একটি গ্রামে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।
রাজস্থানের পিপলান্ত্রি নামের একটি গ্রামে প্রতিটি মেয়েশিশুর জন্ম উপলক্ষে রোপণ করা হয় ১১১টি গাছ। গ্রামের সবাই মেয়েশিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য জমা রাখেন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ।
১১১টি গাছ লাগিয়ে মেয়েশিশুর জন্ম উদযাপনের পাশাপাশি গ্রামের সবাই মিলে জমা করেন ২১ হাজার রুপি। শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে জমা করা হয় ১০ হাজার রুপি। এই অর্থ ব্যাংকে জমা রাখা হয়। ২০ বছরে পা দিলে সেই অর্থের দাবিদার হয় মেয়েটি। এ ছাড়া শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করা ও প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার বিয়ে না দেওয়ার বিষয়েও একটি চুক্তি সই করেন মেয়ের বাবা-মা।
নিজের ছোট্ট মেয়েকে হারানোর কষ্ট ভুলতে ২০০৭ সালে এই অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছিলেন সেই গ্রামেরই বাসিন্দা শ্যামসুন্দর পালিওয়াল। তারপর গত ছয় বছরে পিপলান্ত্রি গ্রামে লাগানো হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার গাছ। প্রতিটা মেয়েকন্যার জন্য ১১১টি ও প্রতিজন মৃত ব্যক্তির জন্য ১১টি। গ্রামের সব সদস্য মিলেই দেখভাল করেন এই অভিনব সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের। সাধারণত ঔষুধি গাছ লাগিয়ে থাকেন গ্রামের অধিবাসীরা। সেখান থেকে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তাঁরা।
অভিনব এই উদ্যোগের ফলে গ্রামটি হয়ে উঠেছে সবুজ। পাল্টেছে নারীসংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, সেই গ্রামে অপরাধপ্রবণতা কমে গেছে ব্যাপক হারে। গত সাত বা আট বছরে সেই গ্রামের কাউকে পুলিশের কাছে গিয়ে মামলা করতে হয়নি।
পিপলান্ত্রির অনুকরণে অনেক গ্রামই এখন মেয়েশিশুর জন্ম উদযাপন করছে গাছ লাগিয়ে। বুডানিয়া গ্রামে প্রতিটি মেয়েশিশুর জন্মের সময় লাগানো হয় ১০০টি গাছ। লুহাভাদ গ্রামও উদ্যোগটি নিয়েছে অনেক ছোট পরিসরে। সেখানে লাগানো হয় একটি গাছ।