ক্যামেরাকে বন্দুক ভেবেছিল শিশুটি
সম্ভবত যুদ্ধের সবচেয়ে মন খারাপ করা ছবি এটি। দেখুন, ছবিতে দেখা যাচ্ছে মাত্র চার বছর বয়সী একটি শিশু ‘হ্যান্ডস আপ’-এর ভঙ্গিতে দুই হাত মাথার ওপরে তুলে রেখেছে। ছবিটি দেখে আপনার মনে হতে পারে তার সামনে হয়তো কেউ বন্দুক তাক করেছে। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হলো বন্দুক নয় শিশুটির সামনে তাক করা হয়েছিল একটি ক্যামেরা। শিশুটিকে আঘাত করতে নয় বরং তার ছবি তুলতে চেয়েছিলেন এক নির্দোষ ফটোসাংবাদিক।
তুরস্কের ফটোসাংবাদিক ওসমান সাগিরলি সিরিয়ার একটি উদ্বাস্তু শিবির থেকে এই ছবি তোলেন। এরপর গত ২৪ মার্চ ফটোসাংবাদিক নাদিয়া আবু শাবান তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এই ছবি প্রকাশ করেন। এর পরই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এই ছবি। শুধু নাদিয়ার টুইটটিই রিটুইট করা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৭ বার। এ ছাড়া তার অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে নিজের ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়ে আরো অসংখ্যবার।
ছবিতে দেখা যায় ক্যামেরা তাক করতে দেখেই হাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে শিশুটি। ভয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আর চোখে প্রবল ভয় নিয়ে ক্যামেরার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে সে।
এনডিভি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ছবিটি তুরস্কের কোনো একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমগুর ব্যবহারকারী একজন ওই ছবি সম্পর্কে লেখা সংবাদ অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘হঠাৎ তার মুখ নিচে নেমে গেল। সে তার নিচের ঠোঁটটা দাঁত দিয়ে চেপে ধরল এবং ধীরে ধীরে দুই হাত ওপরে তুলল। এ সময় সে একটি কথাও বলেনি। সেই শিশু যে ক্যামেরাকে মনে করে তাকে আঘাত করতে আসা মেশিন গান, তাকে কিভাবে আশ্বস্ত করা যায় তা জানি না। আদি হুদিয়া নামের চার বছরের এই শিশু হামাসে চালানো বোমা হামলায় তার বাবাকে হারিয়েছে। সিরিয়ার তুরস্ক সংলগ্ন সীমান্তের একটি উদ্বাস্তু শিবিরে মা ও তিন ভাইবোনসহ বাস করে সে।’
সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই ছবি ও সংবাদটি ২০১২ সালের বলে কেউ কেউ দাবি করলেও এ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। এমনকি এ সম্পর্কে ফটোসাংবাদিক ওসমান সাগিরলিরও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে যে সময়েরই হোক না কেন, এই ছবি এবং একে ঘিরে যে ঘটনা তা কাঁদিয়েছে বিশ্বের লাখো মানুষকে। যুদ্ধের ভয়াবহতা, জীবনের অনিরাপত্তা, উদ্বাস্তু শিবিরের জীবন এসব কিছু নিয়ে যেন নতুন করে ভাবাচ্ছে এই ছবি। চার বছরের একটি শিশুর চোখেমুখে মৃত্যুভয় দেখলে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন হৃদয়ের মানুষও সম্ভবত কেঁপে উঠবেন। আর সেই ছবিটিই এখন যুদ্ধ-সহিংসতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে বিশ্ববাসীকে। কেননা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করে যাওয়ার দায়িত্বটা আমাদের সবার কাঁধেই বর্তায়।