মানুষ কেন আহাম্মকদের ভোট দেয়
রাজনীতিবিদ। তাঁদের খ্যাতির অবস্থা এখন বেশ খারাপ। সত্যি বলতে কি, এটা তাঁদেরই দোষ। তবে এটা ভাবাও বোকামি হবে যে, সব রাজনীতিবিদই এমন। কারণ, তাঁরা সবাই যদি এমনই হতেন, তাহলে অনেক আগেই দেশের পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ত। তারপরও, সবাই মনে করে তাঁরা নিন্দার্হ্য, সুতরাং সব সময় নিকৃষ্টতমটাই ভাবেন।
রাজনীতিবিদরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু কথা রাখেন না। তাঁরা ট্যাক্স কমানো, মানুষের কল্যাণে ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেন, কিন্তু তা কার্যকর করেন না। তাঁরা আহাম্মক, তাঁরা ক্ষমতায় যাওয়ার যোগ্য না।-এমন কথা আমরা প্রায়ই বলি। রাজনীতিবিদরা মিথ্যা কথা বলেন, এটা যেমন ঠিক, তেমিনি এটাও ঠিক যে এমন অসংখ্য রাজনীতিবিদ আছেন যাঁরা আসলেই জনগণের মঙ্গল করতে চান। কিন্তু বিনিময়ে তাঁদের নেতিবাচক মন্তব্যই মেলে।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান তাঁদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাজনীতি নিয়ে অনেক নেতিবাচক ধারণা আছে। রাজনীতিতে একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেন এবং বেশির ভাগই রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। তবে এটাও ঠিক যে কোটি মানুষের একটি দেশ চালানো সহজ কথা নয়।
আহাম্মকের সংজ্ঞা আপনার কাছে অন্য রকমও হতে পারে, তবে সব রাজনীতিবিদই আহাম্মক নন। মজার ব্যাপার হলো, এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই আহাম্মক।
খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই সারাহ পলিন কিংবা টেড ক্রুজের মতো ব্যক্তিদের দ্বারা নিপীড়িত হতে হয়েছে। এঁরা দুজনেই আবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন/আছেন। এ ক্ষেত্রে আদর্শ জর্জ ডব্লিউ বুশ আট বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এই মানুষটার আহাম্মকিই তাঁকে টিকিয়ে রেখেছিল, যাঁর নেতৃত্বে ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার।
নিজেদের ব্যবস্থায় বহু প্রদর্শনযোগ্য আহাম্মকি থাকায় যুক্তরাজ্যকেও পরিপাটি বলা যাচ্ছে না। মাইকেল গুভ, ক্রিস গ্রেলিং, গ্র্যান্ট শ্যাপস, জেরেমি হান্ট, ডেভিড ট্রেডিনিকের সমন্বয়ে একটি হাস্যকর লেবার পার্টির কারণে ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টির উত্থান ঘটে। এবং দায়িত্ব পান একজন আনাড়ি মেয়র বরিস জনসন।
অনেক মানুষই ভাবেন যে, বরিস জনসন একজন ভীষণ বুদ্ধিমান বা বিপজ্জনক মানুষ, যিনি কিনা আসলে শুধুই একটি ষাঁড় হওয়ার ভান করছেন। অর্থাৎ একজন বুদ্ধিমান মানুষ শুধু রাজনৈতিক খ্যাতি পাওয়ার জন্য বোকা হওয়ার ভান করছেন।
যুক্তিগতভাবে আপনি কী চাইবেন? আপনি চাইবেন যে, একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে, যেন তিনি সবচেয়ে ভালো উপায় ও পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশ পরিচালনা করেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যাঁদের বিচার-বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তেমন ব্যক্তিদের প্রতিই মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। এখানে অবশ্য মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত, কারণ এসবের সমন্বয়ই হলো রাজনীতি। কিন্তু এই প্রপঞ্চকে ব্যাখ্যা করতে বেশকিছু মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া রয়েছে।
যেকোনো গবেষণাতেই দেখা যায় যে, আত্মবিশ্বাসী মানুষ সহজে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারেন। বেশির ভাগ গবেষণাতেই উদাহরণ হিসেবে এটা বলা হয় যে, আদালতে যেমন একজন বিব্রত সাক্ষীর চেয়ে আত্মবিশ্বাসী সাক্ষীর সাক্ষ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। গাড়ি বা বাড়ি বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি দেখা যায়। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রেও এই কথাটি প্রযোজ্য। তাই রাজনীতি করতেও আত্মবিশ্বাসী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডানিং-ক্রগার তত্ত্ব অনুযায়ী, কম বুদ্ধিমান মানুষ অবিশ্বাস্য রকম আত্মবিশ্বাসী হয়। আর বেশি বুদ্ধিমান মানুষ হন তার ঠিক উল্টোটা।
তাই আপনি যদি আপনার রাজনৈতিক দলকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ খোঁজেন, তাহলে এ জন্য বুদ্ধিমান মানুষ বেছে নেওয়াটা হবে একটি বাজে সিদ্ধান্ত। এতে আপনার পরিকল্পনার উল্টোটা হতে পারে। কারণ গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে, একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ যখন মিথ্যা বলার জন্য বা ভুল কাজ করে ধরা পড়েন, তখন তিনি দ্রুত সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
তাই স্বভাবতই কম বুদ্ধির আর অতি আত্মবিশ্বাসের লোকজনদেরই রাজনীতির মাঠে আনাগোনা বেশি। কেউ যখন নেতা নির্বাচন করতে যায়, সে তখন আত্মবিশ্বাসী লোকটিকেই ভোট দেয়। আর এভাবেই নেতা হিসেবে উঠে আসে কম বুদ্ধির বা আহাম্মক ধরনের মানুষগুলো।