পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্ব
বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছেছে ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তি। ঐতিহাসিক এই সমঝোতা অনুযায়ী ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করবে আর পশ্চিমা বিশ্ব দেশটির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেবে। সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তি সমঝোতায় পৌঁছায়। এখন তাদের লক্ষ্য হবে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে একটি খসড়া চুক্তিতে পৌঁছা।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ছয় বিশ্বশক্তির মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি। লুজানের বিউ রিভেজ প্যালেস হোটেলে দীর্ঘ আট দিন দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তির সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল ৩১ মার্চ। সময়সীমা দুই দিন পার হওয়ার পর ছয় বিশ্বশক্তি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তির কাঠামো উপস্থাপন করে। এটি একটি অলিখিত সমঝোতা, কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নয়। এর পরও পশ্চিমা বিশ্ব এটিকে একটি কঠিন জয় এবং ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবেই দেখছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সমঝোতাকে স্বাগত জানান এবং একে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেন। আর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন খসড়া চুক্তির প্রশংসা করে বলেন, ‘এই সমঝোতা মধ্যপ্রাচ্যে অঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক ফেডারিকা মুগেরিরি এক যৌথ বিবৃতিতে সমঝোতার কথা ঘোষণা করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান পরমাণু স্থাপনায় সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনবে, ১৯ হাজার সেন্ট্রিফিউজ কমিয়ে ছয় হাজার করা হবে। একই সঙ্গে পরমাণু স্থাপনার নকশায়ও পরিবর্তন আনবে, যেন পরমাণু অস্ত্রের জন্য নির্দিষ্ট মানের প্লুটোনিয়াম তৈরি করা সম্ভব না হয়। এ ছাড়া ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা (আইএইএ) নজরদারি থাকবে। অন্যদিকে ইরানের এসব পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্ব দেশটির ওপর থেকে ধাপে ধাপে অবরোধ তুলে নেবে।
পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্ব দেশটির ওপর কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। কিন্তু পরমাণু অস্ত্র তৈরির কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ইরান। দেশটির দাবি, বিদ্যুৎ উৎপাদনই তাদের পরমাণু কর্মসূচির একমাত্র লক্ষ্য।