স্মৃতি ইরানিকাণ্ড, দিন পেরোতেই আসামিরা জামিনে
ভারতের একটি পোশাক বিক্রয়কেন্দ্রের পোশাক পরিবর্তন কক্ষে (ট্রায়াল রুম) গোপন ক্যামেরায় দেশটির মানবসম্পদ উন্নয়ন (শিক্ষা) মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির ভিডিও ধারণের ঘটনায় অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত চারজনের কাছ থেকে জামানত হিসেবে পাঁচ হাজার রুপি করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত চারজনকে গোয়া ছাড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার গোয়া রাজ্যের একটি বিখ্যাত পোশাক বিক্রয়কেন্দ্রে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, একসময়ের জনপ্রিয় এই নাট্য অভিনেত্রী বিব্রতকর এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।
ঘটনার পরই স্থানীয় ক্যানডোলিম থানা পুলিশ ‘ফ্যাবইন্ডিয়া স্টোর’ নামে পোশাকের দোকানটির বিরুদ্ধে নারীর শালীনতাহানি ও গোপন ক্যামেরা বসানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করে।দোকানের পরিচালকসহ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চার কর্মীকে আটকও করা হয়। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফ্যাবইন্ডিয়ার ওই শাখাটিও।
অবশ্য গতকালই ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছিল, এ ঘটনার শিকার স্মৃতি ইরানি না হয়ে যদি অন্য কেউ হতেন, তাহলে কী হতো তা সহজে অনুমেয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় আশা প্রকাশ করা হয়েছিল, ভারতে বিভিন্ন দোকানের বিশেষ করে নারীদের ট্রায়াল রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি এবার হয়তো বন্ধ হবে।
এনডিটিভি লিখেছিল, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীদের শালীনতাহানির বিষয়ে ঘুমন্ত ভারতের প্রশাসনের এবার হয়তো টনক নড়বে।
আজ সকালে গোয়ার আদালত অভিযুক্ত চারজনকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছেন। পুলিশ ওই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে হেফাজতের আবেদন করে। কিন্তু আদালত এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের কোনো ভিত্তি খুঁজে না পাওয়ায় আসামিদের শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী জিনিউজকে জানান, অভিযুক্ত ফ্যাবইন্ডিয়ার শাখাটির পরিচালক আদালতকে বলেছেন, ‘ক্রেতারা অনেক সময় চারটি পোশাক নিয়ে ট্রায়াল রুমে ঢোকেন। বেরিয়ে আসেন তিনটি নিয়ে। বাকি একটি নিজেদের জামার ভেতর লুকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যান। গত সপ্তাহেও এমন এক রুশ পর্যটককে আমরা ধরেছি।’
মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীর যুক্তি, কোনো পোশাক এমনভাবে গায়েব হয়ে গেলে তার দাম কর্মীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়। সেসব রুখতেই ক্যামেরাটি বসানো হয়েছিল। কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে নয়।
মামলায় ঘটনার বিবরণে জানানো হয়, শুক্রবার দুপুরে পর্যটন রাজ্য উত্তর গোয়ার কালাঙ্গুট শহরে ফ্যাবইন্ডিয়া নামের একটি দোকানে পোশাক কিনতে যান ভারতের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে দুই দিনের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। স্মৃতি ইরানি দোকান থেকে কয়েকটি পোশাক বেছে নিয়ে ট্রায়াল রুমে ঢোকেন। তখনই তাঁর নজরে পড়ে লুকানো ক্যামেরাটি।
তিনি দ্রুত বের হয়ে এসে স্বামীকে ঘটনাটি জানান। স্বামী জুবিন ইরানি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে দোকানের কর্মীদের ওপর চড়াও হন। পরে জুবিন তাঁদেরকে ভিডিওচিত্র দেখাতে বাধ্য করেন। এতে দেখা যায়, সত্যি সত্যিই মন্ত্রীর পোশাক পাল্টানোর দৃশ্য ধারণ করা হচ্ছিল!
ফ্যাবইন্ডিয়ার ট্রায়াল রুমের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, সেটি এমনভাবে বসানো, যাতে করে যিনি পোশাক বদলাচ্ছেন তাঁর পেছন দেখা যায়। একই সঙ্গে আয়নায় তাঁর প্রতিচ্ছবিও ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
ফ্যাবইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইলিয়াম বিসসেল গণমাধ্যমকে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘শুধু নিরাপত্তার খাতিরেই প্রথা মেনে তাঁদের প্রতিটি দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত দোকানটির কোনো কর্মীই বিষয়টি নিয়ে কোনো ‘অনভিপ্রেত আচরণ’ করেননি।