টকশোতে নারী সাংবাদিককে ধর্ষণের হুমকি সিনেটরের!
পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে চলছিল লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠান বা টকশো। এতে অংশ নেওয়া অতিথিদের মধ্যে ছিলেন এক নারী সাংবাদিক, একজন ইসলামপন্থী সিনেট সদস্য এবং একজন ব্যারিস্টার।
নিউজ ওয়ান চ্যানেলে প্রচারিত সরাসরি সেই অনুষ্ঠানে আলোচনার এক পর্যায়ে ওই নারী সাংবাদিককে ধর্ষণের হুমকি দেন সিনেট সদস্য। আর টেলিভিশনে সেই দৃশ্য সরাসরি দেখেছেন লাখো দর্শক।
নিউজ ডট কম ডট এইউ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘টেন পিএম উইথ নাদিয়া মির্জা’ শিরোনামের ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন নারী সাংবাদিক মারভি সারমেদ, জামায়াত উলামা-ই-ইসলামের রক্ষণশীল সিনেট সদস্য হাফিজ হামদুল্লাহ এবং ব্যারিস্টার মাসরুর সাহিব। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে বেড়ে যাওয়া ‘অনার কিলিং’ নিয়ে সেদিন আলোচনা করছিলেন অতিথিরা।
আলোচনার একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মাসরুর অনার কিলিংয়ের বিষয়ে দেশটির ইসলামপন্থী নেতাদের চুপচাপ থাকার প্রসঙ্গ তুলে কটাক্ষ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হামদুল্লাহ।
এরপর আলোচনায় যোগ দেন মারভি সারমেদ। তিনি বলেন, বেশ কিছু ব্যাপারে তিনিও ব্যারিস্টার মাসরুরের সঙ্গে একমত। এ সময় এই সাংবাদিককে মাঝপথে থামিয়ে দেন সিনেটর হামদুল্লাহ। শুরু হয় বিষয়টি নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক।
এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মারভি বলেন, “তিনি ভীষণ খারাপ সব শব্দ ব্যবহার করে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা শুরু করেন। তিনি আমাকে বেশ্যা বলে গালি দেন। বলেন, ‘তোমার পায়জামা খুলে দেব এবং তোমার মায়েরও পায়জামা খুলে দেব’।”
এই কথার প্রতিবাদে যখন ওই নারী সাংবাদিক হামদুল্লাহকে বলেন যে এসব নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে করুন, তখন তাঁকে মারতে আসেন হামদুল্লাহ। এ সময় এই সিনেটরকে সরিয়ে দেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। তা না হলে মারভির মুখে লেগে যেত তার চালানো ঘুষি!
মারভি বলেন, ওই ধর্ম ব্যবসায়ী যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন তিনি আবার রোজাও রেখেছিলেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সিনেট চেয়ারম্যান রেজা রাব্বানিকে হামদুল্লার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছেন মারভি। সেই সঙ্গে নিউজ ওয়ান চ্যানেলকে এই অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করতেও অনুরোধ করেছেন তিনি।
নিউজ ডট কম ডট এইউর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের সমাজে নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষত স্ত্রী এবং মেয়েদের এখানে পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনার কিলিং, এসিড-সন্ত্রাস, নববধূকে আগুনে পোড়ানো, বাল্যবিবাহ এবং যৌন হয়রানির মতো ঘটনা এখানে খুব স্বাভাবিক। সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার হলো, এসব অপরাধের বেশির ভাগই আইনের আওতায় আসে না। জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য সূচকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থার ১৪৭ তম।
২০১৪ সালে পাকিস্তানের আওরাত ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সেখানে প্রতিদিন ছয়জন নারীকে হত্যা করা হয়, ছয়জন নারী অপহৃত হন, প্রতিদিন চারজন নারী ধর্ষণের শিকার হন এবং তিনজন আত্মহত্যা করেন।
পাকিস্তানের কয়েকটি মানবাধিকার কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর অন্তত এক হাজার ১০০ নারীকে অনার কিলিং বা পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে হত্যা করা হয়।