‘কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা সাধারণ মানুষ খুন করছে’
জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকার তীব্র নিন্দা করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। হিজবুল মুজাহিদীনের নেতা বুরহান ওয়ানিকে ‘কাশ্মীরের তরুণ নেতা’ উল্লেখ করে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তরুণ ওয়ানির মৃত্যুতে তিনি গভীর আঘাত পেয়েছেন। এ ছাড়া ভারত কাশ্মীরে আন্দোলন রুখতে ‘দমনমূলক নীতি’ এবং ‘অতিরিক্ত বল প্রয়োগ’ করছে বলেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে হিজবুল মুজাহিদীনের নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর যত দিন যাচ্ছে, ততই অশান্ত হয়ে উঠছে ভারতের ভূস্বর্গ বলে পরিচিত কাশ্মীর। আজ সোমবারও দফায় দফায় চলেছে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ। শনিবার শুরু হয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত সংঘর্ষে মোট ২৩ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
অপরদিকে বিক্ষোভকারীদের হামলায় ৯৬ নিরাপত্তারক্ষী আহত হয়েছেন। উপত্যকাজুড়ে মোতায়েন রাখা হয়েছে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে এরই মধ্যে ১২ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনীও পাঠানো হয়েছে কাশ্মীর উপত্যকায়।
জম্মু-কাশ্মীরের এই পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামাবাদ আগেই মুখ খুলেছিল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববারই বিবৃতি দিয়ে কাশ্মীরে ভারতের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নিজে কিছু বলেননি। আজ সোমবার নওয়াজ নিজেই মুখ খুললেন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হলো, ‘কাশ্মীরের তরুণ নেতা বুরহান ওয়ানি এবং অন্য অনেক সাধারণ মানুষকে ভারতের সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী যেভাবে খুন করছে, তাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।’ এতে আরো বলা হয়, ‘সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যেভাবে ভারতীয় বাহিনী অতিরিক্ত এবং অবৈধভাবে বল প্রয়োগ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘কাশ্মীরের সাহসী মানুষ যখন জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর, তখন এই দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে ভারত তাদের রুখতে পারবে না।’
এ ছাড়া কাশ্মীরের রাজনীতিবিদ সৈয়দ আলী শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, ইয়াসিন মালিকসহ কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নবাদী নেতাদের আপাতত গৃহবন্দি রাখারও নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রশাসন। এতে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে বলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে বুরহানের মৃত্যুর পরই কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-বৃষ্টি ছোড়ে জনতা। পরদিন শনিবার বুরহানের জানাজার পর কাশ্মীরের একাধিক পুলিশ স্টেশনসহ পাঁচটি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা।
কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিদর্শক শায়েদ জাভিদ মুজতবা গিলানি বলেন, চারটি পুলিশ স্টেশন ও দুটি পুলিশ ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে তাদের ওপর বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া হয়। কুলগাম জেলার একটি বিজেপি কার্যালয়েও ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।
কাশ্মীরে সংঘাতের বেশি প্রভাব পড়েছে পুনওয়ামা, অনন্তবাগ এবং কুলগাম জেলায়। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে স্থগিত রাখা হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অমরনাথ তীর্থযাত্রা। বন্ধ রয়েছে শ্রীনগর ইউজিসির নেট পরীক্ষা। বুরহানের মৃত্যুতে উপত্যকায় বনধের ডাক দেওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে শ্রীনগর ও দক্ষিণ কাশ্মীর। উপত্যকাজুড়ে এখনো বন্ধ রয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা।
কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার আসহার হুসেন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতেই কারফিউ জারি করা হয়েছে। উপত্যকার শান্তি বজায় রাখতে সাধারণ মানুষকে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর উপত্যকাজুড়ে বিভিন্ন মসজিদের লাউডস্পিকারে বাজানো হচ্ছে ভারতবিরোধী স্লোগান। নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরের পণ্ডিতদের উপত্যকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার সময় একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল। ওই সময় চরম পাকিস্তানপন্থী স্লোগানের মাধ্যমে উপত্যকার যুব সম্প্রদায়কে ভারতবিরোধী জেহাদে অংশ নিতে বলা হয়।
বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নাকি মসজিদে ঢুকে জেহাদের অডিও ক্যাসেট চালাচ্ছে বলেও সংবাদ সূত্রে জানা গেছে। উপত্যকাজুড়ে বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, অফিস, কাচারি ও পেট্রলপাম্প।
পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখতে এবং জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি হুরিয়ত কনফারেন্সকে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সব মতামতকে দূরে সরিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং রাজনীতিবিদসহ সবাইকে একজোট হতে হবে। উপত্যকায় শান্তি ফেরানোর জন্য হিংসা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।