পরিবারের ‘সম্মান বাঁচাতে’ পাকিস্তানে ব্রিটিশ নাগরিক খুন
কান্দিল বালুচের ‘অনার কিলিংয়ের’ ঘটনার রেশ কাটেনি এখনো। এর মধ্যেই পরিবারের ‘সম্মান বাঁচাতে’ পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত যুক্তরাজ্যের এক নাগরিককে খুনের অভিযোগ উঠেছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের বরাতে আজ মঙ্গলবার দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা জানায়, দীর্ঘ আট বছর পর পাঞ্জাবের পান্ডেরি গ্রামে নিজের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিউটিথেরাপিস্ট সামিয়া শাহিদ। সেখানেই গত সপ্তাহে রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার হন তিনি।
সামিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর দ্বিতীয় স্বামী সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিক সায়েদ মুখতার কাজিম অভিযোগ করেন, পরিবারের অমতে ‘বহিরাগতকে’ বিয়ে করায় তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় ভয় পেতাম পাকিস্তানে গেলে আমার স্ত্রীকে (সামিয়া শাহিদ) তাঁর পরিবার হত্যা করবে। সেই দুঃস্বপ্নই সত্যি হলো।’
সায়েদ মুখতারের অভিযোগ, সামিয়ার মৃত্যুর পর পাকিস্তান থেকে তাঁর কাছে একটি মোবাইল কল এসেছিল। যাতে এক পুরুষ কণ্ঠ তাঁকে জানায়, পরিবারের ‘সম্মান বাঁচাতে’ সামিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এরপর আমি পাকিস্তানে ফোন করে জানতে পারি একদিন আগেই আমার স্ত্রীকে দাফন করা হয়ে গেছে।
সামিয়ার দ্বিতীয় স্বামী সায়েদ মুখতার ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘হত্যার পরের দিন আমাকে সামিয়ার ভাই বলেছিল, তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। কিন্তু অন্যান্য আত্মীয়রা বলছেন, তার শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমার স্ত্রীকে তাঁর পরিবার খুন করেছে। সে সুস্বাস্থ্যবান ছিল। তার কোনো অসুখ ছিল না। তার বাবা-মা আমাদের বিয়ে মেনে নিতে না পারায় তাঁকে হত্যা করেছে।’
সায়েদ মুখতার জানান, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়ারইয়র্কশায়ারের ব্যাডফোর্ডের উন হলে সামিয়াকে বিয়ে করেন। তিনি দুবাইতে বসবাস করতেন। পরিবারের মতের বাইরে গিয়ে বহিরাগতকে বিয়ে করায় সামিয়ার পরিবার এই বিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর সামিয়ার পরিবারের অনেকেই ফোন করে তাঁকে হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ সায়েদের।
কিন্তু সামিয়ার বাবা বলেন, সায়েদ মুখতার কাজিম মিথ্যে অভিযোগ করছেন। সামিয়া তার নিজের ইচ্ছেয় পাকিস্তান এসেছে, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ ছিল না। এ ছাড়া কোনো প্রকার হুমকির খবরও অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, নিহত সামিয়ার দেহে কোনো জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মারা যাওয়ার দিনই তাঁকে নিজ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে সামিয়াকে মেরে ফেলা হয়েছে এমন আশংকা জানিয়ে ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি নাজ শাহ বলেন, ‘তাঁর দেহ উদ্ধার করে আবার ময়নাতদন্ত করা দরকার।’
যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক বিষয়ক এই মুখপাত্র বলেন, ‘পাকিস্তানে মারা যাওয়া ব্রিটিশ নাগরিকের পরিবারকে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব। আমরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি এবং তথ্য সংগ্রহ করছি। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’