সাগরের অতলে রাশি রাশি রৌপ্যমুদ্রা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা। ভারত থেকে খাজনা বাবদ পাওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কয়েকশ বস্তা রৌপ্যমুদ্রাবাহী একটি জাহাজ হারিয়ে গিয়েছিল সমুদ্রে। সাগরের অতল গভীরে এতদিন লুকিয়ে থাকার পর যুক্তরাজ্যের একটি গুপ্তধন অনুসন্ধানী দল এর সন্ধান পেয়েছে। আর রৌপ্যমুদ্রাগুলো তুলে আনার পর উদ্ধারকারী দলটির চোখ একেবারে চড়কগাছ।
হবেই না কেন! এ যে রাশি রাশি রুপার মোহর। গুনে শেষ করা যায় না। যেন একেবারে সাত রাজার ধন। বছরের পর বছর ধরে এত গুপ্তধন লুকিয়ে ছিল তা জানাই ছিল না বিশ্ববাসীর।
উদ্ধারকারী দলটি জানায়, প্রায় ১০০ টন রৌপ্যমুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আছে অল্প পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রাও। বর্তমানে যার আনুমানিক বাজারদর চার কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র ডেইলি মেইল।
ডেইলি মেইলের সূত্রে আরো জানা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭ হাজার ফুট গভীরে এই গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত সমুদ্রের এত গভীর থেকে গুপ্তধন উদ্ধার করেনি কেউ।
লন্ডনের দ্য ব্রিটিশ লাইব্রেরির সূত্রে রয়টার্স জানায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ সালে ভারতের বম্বে (বর্তমান মুম্বাই) থেকে ইংল্যান্ড যাচ্ছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিনচালিত ব্রিটিশ জাহাজ ‘দ্য এস এস সিটি অব কায়রো।’ ভারত থেকে খাজনা বাবদ পাওয়া কয়েকশ বস্তা রৌপ্যমুদ্রা ছিল জাহাজটিতে।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের আগ্নেয়দ্বীপ সেন্ট হেলেনা থেকে ৪৮০ মাইল দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরে হিটলারের নাত্সি বাহিনীর ডুবোজাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় রুপাভর্তি ব্রিটিশ জাহাজটি।
এতে জাহাজের গুপ্তধনসহ নাবিকদেরও সলিল সমাধি ঘটে। এ ঘটনার পরে ওই সম্পদ চিরতরে হারিয়ে গেছে বলেই ধরে নেয় ব্রিটিশ সরকার।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি গুপ্তধন অনুসন্ধানী দল হারিয়ে যাওয়া এই জাহাজটির খোঁজে আটলান্টিকের গভীরে তল্লাশি শুরু করে। বেশ কয়েক মাস তল্লাশির পরই খোঁজ মেলে ‘দ্য এস এস সিটি অব কায়রোর।’
সন্ধানীদলের এক মুখপাত্রের বরাতে গার্ডিয়ান জানায়, সমুদ্রের এত গভীরে তল্লাশি চালানো ছিল সত্যিই কঠিন। সমুদ্রের অতলে পানির চাপ ছিল মারাত্মক। এ ছাড়া সমুদ্রের তলদেশে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের ওপর ছিল প্রায় ২০ ফুটের বেশি পুরু কাদার স্তর। তাই ক্ষুদ্রাকৃতির রোবোটিক সাবমেরিনের সাহায্যে এই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই রোবোটিক সাবমেরিনের সাহায্যেই গুপ্তধনগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গার্ডিয়ান যুক্তরাজ্যের গুপ্তধন সন্ধানীদলটির পরিচয় প্রকাশ করেনি। তবে জানিয়েছে, ২০১৩ সালেই ডুবে যাওয়া জাহাজটির সন্ধান পায় গুপ্তধন সন্ধানীদলটি। এতদিন খবরটি তারা প্রকাশ্যে আনেনি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে রৌপ্যমুদ্রাগুলো জনসম্মুখে আনা হয়।