নেপালে কাঁপছে পাহাড়, ধসের শঙ্কা
কিছুতেই যেন কাটছে না হিমালয়কন্যা নেপালের দুর্দশার পালা। গত শনিবারের প্রবল ভূমিকম্পে সাজানো দেশটিকে প্রায় ধ্বংস করেও যেন ক্ষান্ত হচ্ছে না প্রকৃতি। এবার নতুন আতঙ্ক ধসের শঙ্কায় কাঁপছে নেপাল।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই নেপালে পাহাড়ধস শুরু হবে। সেই ধসে আরো বিপদের সামনে পড়বে নেপাল। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে নেপাল সরকারকে সতর্ক করেছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন, শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে অনেক পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ আলগা হয়ে গেছে। বর্ষা নামলেই সেই আলগা হয়ে যাওয়া অংশগুলো ভেঙে পড়বে। ফলে শুরু হবে প্রবল ধস।
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের একদল বিজ্ঞানীর মতে, সবচেয়ে বেশি ধস নামবে নেপাল-তিব্বত সীমান্তের পূর্বাঞ্চলে ও মাউন্ট এভারেস্টের পশ্চিমাংশে। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উত্তর কাঠমান্ডুর বিশাল এলাকা। আর ধসের কবলে পড়বে নেপালের ১০ হাজারের বেশি এলাকা।
এরই মধ্যে অবশ্য পাহাড় ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে গেছে। গতকাল বুধবার নেপালের উত্তরের মিয়াং অঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। মিয়াংয়ের বাসিন্দা ৮১ বছর বয়সী সত্যম জরুর বয়ানে টাইমস অব ইন্ডিয়া খবর ছেপেছে, ‘নেপালে কাঁপছে পাহাড়। পাহাড়ে সব সময়ই মৃদু কম্পন আর গুমগুম আওয়াজ।’
বিধ্বংসী ভূমিকম্পের জেরে হিমালয়ে শুরু হয়েছে তুষারধস। প্রবল ঝাঁকুনিতে মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পের একাংশসহ হিমালয় পর্বতমালার একটি বিরাট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পর্বতমালায় হাজার বছর ধরে জমে থাকা বরফের ওই বিরাট চাইগুলো গড়িয়ে নিচের দিকে নেমে এলে তার ধাক্কার প্রভাব পড়বে নেপালকে ঘিরে থাকা কম উচ্চতার পাহাড়গুলোতে। এই বিষয়ও ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে, গত ২৫ এপ্রিলের ওই ভয়াবহ ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নেপালের মোট অর্থনীতির চেয়েও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। দেশটির অর্থনীতি মূলত পর্যটননির্ভর। প্রতিবছর আট লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যান। নেপালের জিডিপির ৩ শতাংশ অর্জিত হয় বিদেশি পর্যটকদের ব্যয় থেকে। আর আবাসনসহ অন্যান্য সেবা খাত থেকে দেশটি অন্তত ১৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে, যা নেপালের জিডিপির প্রায় অর্ধেক।
অর্থনীতিবিষয়ক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ খবর ছেপেছে, এ দুর্যোগ দেশটির পর্যটনশিল্পে ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
ব্লুমবার্গ বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ থেকে জানা যায়, ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হওয়ার আশঙ্কা ৩৪ শতাংশ। আর তা ১০ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকার আশঙ্কা ২৯ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আইএইচএস গ্লোবাল ইনসাইটের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজীব বিশ্বাস জানিয়েছেন, নেপালে ভূমিকম্পের অর্থনৈতিক প্রভাব জিডিপির ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
গত শনিবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিপুল ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো ব্যাপক সংখ্যক মানুষ আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।