পাকিস্তানের সাহায্য স্পর্শও করেনি নেপাল!
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে মানবিক সহায়তা হিসেবে ‘মাংসের মসলা’ পাঠিয়েছে পাকিস্তান। গরু জবাই নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের এমন সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে নেপাল। পাকিস্তানের এমন সহায়তা নিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের সদস্য দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেপালের ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু। তাদের কাছে গরু পবিত্র প্রাণী তাই এটি জবাই নিষিদ্ধ। গরু জবাইয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছর কারাদণ্ড। নেপালের কর্মকর্তারা দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের সহায়তার বিষয়টি অবহিত করেছেন। বর্তমানে একটি তদন্ত চলছে, পরে বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের মানবিক সহায়তা ছোঁয়া থেকেও বিরত রয়েছে নেপালের মানুষ।
গত ২৫ এপ্রিল স্থানীয় সময় বেলা ১২টার দিকে নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এতে দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন এলাকার পুরোনো ও নতুন অনেক স্থাপনা ধসে পড়ে। গতকাল পর্যন্ত ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ২০৪ জন। এখনো দেশটির অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে পারেনি। তাই মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে নেপালে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রচণ্ড সংকট দেখা দিয়েছে।
ভারত থেকে কাঠমান্ডুতে ৩৪ সদস্যের একটি চিকিৎসকদল পাঠানো হয়েছে। এই দলের সদস্যরা সম্প্রতি বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন দেশের পাঠানো সহায়তা আনতে যান। তখন পাকিস্তান থেকে পাঠানো মানবিক সহায়তার মধ্যে বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটসহ ‘মাংসের মসলা’র বিষয়টি তাঁদের চোখে পড়ে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় চিকিৎসকের দল হোটেল থেকে খাবার কেনেন।
চিকিৎসকের দল বলেন, পাকিস্তান থেকে আসা কোনো মানবিক সহায়তায় তাঁরা স্পর্শ করেননি। অধিকাংশ স্থানীয় মানুষই তখন এই বিষয়টি জানত না। জানার পর তারাও পাকিস্তানের পাঠানো সহায়তা থেকে দূরে রয়েছে। তাঁরা আরো বলেন, পাকিস্তান এমন সহায়তা পাঠানোর মধ্যে দিয়ে নেপালের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে।
পাকিস্তানের পাঠানো সহায়তার বড় প্লাস্টিকের ব্যাগের লেখাতে দেখা যায়, এর মধ্যে আছে আলু ভুজিয়া ও গরুর মাংস রান্নার মসলা। আরো লেখা আছে এটি বিক্রির জন্য নয় এবং পাকিস্তানের নওশেরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসব পণ্য পাঠানো হয়েছে।
নেপালের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘পাকিস্তানের সহায়তায় মাংসের মসলার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। পরবর্তী সময়ে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টি পাকিস্তানকে জানানো হবে।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাসনিম আসলাম বলেন, নেপালে পাঠানো সহায়তার বিষয়ে তাঁরা অবগত নন। সহায়তা পাঠিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ)।
পাকিস্তানের এনডিএমএ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তারা সামরিক বাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিমানবাহিনীর সহায়তায় ২৮ এপ্রিল মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।সংস্থাটির মজুদ থেকে পাঠানো পণ্যের মধ্যে ছিল ২৫০টি তাঁবু, ২০০টি খাবারের প্যাকেট (দুই টন), এক হাজারটি তৈরি করা খাবারের প্যাকেট, এক হাজার চাদর ও ৩৩ কার্টন ওষুধ।