বিজেপি-কংগ্রেস মুখোমুখি, স্থলসীমান্ত চুক্তি অনিশ্চিত
সংশোধিত বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আসছে ৫ মে বিলটি ভারতের রাজ্যসভায় পেশ করা হবে এবং তা চলতি অধিবেশনেই পাস হবে বলে আশা করছেন বিজেপির নেতারা। তবে আসামকে বাদ দিয়ে আংশিক স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চাইলে কংগ্রেস বাধা দেবে বলে জানিয়েছে। এতে চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
চলতি সপ্তাহে ভারতের মন্ত্রিসভায় সংশোধিত স্থলসীমান্ত বিলটি পাস হয়েছে। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছেও বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে।
তবে সংশোধিত বিলটির ব্যাপারে ভারত সরকার এখনো বাংলাদেশের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ’ করেনি বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহম্মদ শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘এই সংশোধিত বিলের ব্যাপারে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানি না। এ ব্যাপারে জানার পরই মতামত জানাব।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ১৯৭৪ সালে চুক্তিটি হয়েছিল। ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষের সম্মতিতে এটি বাস্তবায়িত হবে।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম দ্য হিন্দুকে বলেন, আসামকে বাদ দিয়ে এই বিল পাসে জটিলতা দেখা দেবে। এই চুক্তি প্যাকেজের মতো একটি সমঝোতা ছিল। এই প্যাকেজ থেকে কোনো অংশ বাদ দেওয়া হলে জটিলতা দেখা দেবে।
এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, আসামকে বাদ দিয়ে মোদি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে আংশিক স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চাইলে, কংগ্রেস বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা গুলাম নবী আজাদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিল মনমোহন সরকার। কিন্তু আসামের ভোটে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই আপাতত এই রাজ্যকে ওই চুক্তির বাইরে রাখতে চাইছে বিজেপি।’
কংগ্রেস নেতা আজাদ আরো বলেন, ‘বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সংকীর্ণ রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ মেনে নেবে না কংগ্রেস। সরকারের মন্ত্রীদেরও এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ফলে বিলটি পাস করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ভারতের সংসদবিষয়কমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু জানিয়েছিলেন, ৫ মের পর বিলটি সংসদে পেশ করা হবে এবং তা চলতি অধিবেশনে পাস করা সম্ভব হবে। তবে বিলের আওতা থেকে আসামকে বাইরে রাখা হচ্ছে। আসামের বিধান সভার ভোটের কথা মাথায় রেখে এবং সেখানকার বিজেপি নেতাদের দাবি মেনে নিয়েই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতারা বলেন, রাজনৈতিক কারণে বিজেপি যদি আসামকে এই বিল থেকে বাইরে রাখতে পারে তবে কংগ্রেসই বা ছাড় দেবে কেন। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের সমর্থন মিলবে কি না তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মোদি সরকার তাই তৃণমূলের সমর্থন পাওয়া নিয়ে আশাবাদী বলে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কংগ্রেসের কারণে বিলটি পাসের পথ অমসৃণ হয়ে পড়ল।
তবে এই সপ্তাহের শুরুর দিকে দ্য হিন্দুকে কয়েকজন মন্ত্রী পার্লামেন্টে সংশোধিত বিলটি পাসের ব্যাপারে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামকে রেখে স্থল সীমান্ত চুক্তি হলে আসামের ২৬৮.৩৯ একর জমি বাংলাদেশকে ফেরত দিতে হবে। এর বিনিময়ে আসাম কিছু পাবে না। এই অবস্থায় বিধান সভা নির্বাচনের কথা চিন্তা করেই বিজেপি আসামকে এই চুক্তিতে শামিল করতে চাচ্ছে না। ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এখানকার ১৪ টির মধ্যে সাতটি আসন পেয়েছে। আগামী নির্বাচনেও জেতার আশায় মোদি সরকার আসামকে চুক্তির বাইরে রাখতে চাইছে।