ব্রিটেনের নির্বাচন : ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ইঙ্গিত
ব্রিটেনের নির্বাচন আগামীকাল বৃহস্পতিবার। নির্বাচন-পূর্ব সবগুলো জরিপ একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এড মিলিব্যান্ড-এর লেবার পার্টি এবং ডেভিড ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টি দুই দলই জোটের জন্য ছোট দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে।
যদিও নির্বাচন-পূর্ব বিতর্কে মিলিব্যান্ড ও ক্যামেরন দুজনই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে এই দুই দলের সঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (লিব-ডেম), ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি (ইউকেআইপি) এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) মতো ছোট দলগুলো জোটের কারণে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসছে। গতবারের মতো এবারও কনজারভেটিভরা জোটে পাবে লিব-ডেমকে। এ জোটে ভিড়তে পারে কট্টরপন্থী ইউকেআইপিকে। অভিবাসীদের বিষয়ে এরা একজোট। এরা অভিবাসীবিরোধী।
অন্যদিকে লেবার পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী এসএনপি। ওয়ালসের প্লাইড কামরি আর গ্রিন পার্টির মতো দলও লেবারদের সঙ্গে থাকতে চায়। তবে মিলিব্যান্ড এসব প্রদেশনির্ভর দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী নন। কেননা লোকমুখে প্রচার হচ্ছে এসব দল ব্রিটেনের অখণ্ডতায় হুমকি। এর মধ্যে এসএনপি এক ধাপ এগিয়ে। গত বছর স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা নিয়ে গণভোটের আয়োজনে সবচেয়ে বেশি নাচানাচি করেছে ওই এসএনপি। ব্রিটেনের গণমাধ্যমগুলোতে সর্বশেষ যে জরিপটা দেখানো হচ্ছে, তাতে কনজারভেটিভ আর লেবারদের অবস্থান মুখোমুখি। ওই জরিপে দেখা গেছে, কনজারভেটিভ ৩৪ শতাংশ, লেবার পার্টি ৩৩ শতাংশ, ইউকেআইপি ১৪ শতাংশ এবং লিব-ডেম পাবে সাত শতাংশ মানুষ।
বাংলাদেশ আর ভারত-পাকিস্তানের মানুষ গভীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ব্রিটেনের নির্বাচনের দিকে। কারণটা পরিষ্কার। অভিবাসী হিসেবে এদেশগুলোর মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এ নির্বাচনে। ক্যামেরন ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশিসহ অন্য অভিবাসীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। সে সংশয় এখনো কাটেনি। কেননা ক্যামেরনের কনজারভেটিভ নিজেদের জোটে এবার ইউকেআইপির মতো কট্টর রক্ষণশীলদের জোটে পাচ্ছে। যাদের অন্যতম এজেন্ডা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়া।
এগিয়ে আছে বাংলাদেশিরা
হয়তো বাংলাদেশিসহ অন্যান্য অভিবাসীদের ভোটে লেবার পার্টির বাক্স ভরবে। বাংলাদেশিরা লেবারদের পতাকাতলে দাঁড়ানোর অবশ্য আরো একটা কারণ আছে। এবার ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে ১২ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে সাতজনই লেবার পার্টির টিকিটে নির্বাচন করছেন। প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান এমপি রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিকী, রুপা হকের অবস্থান বেশ ভালো। নির্বাচন-পূর্ব জরিপে এ তিনজন বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে আছেন। রুশনারা আলী নিজের কাজে বেশ প্রশংসা এবং দল ও ব্রিটেনের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।
রুশনারা নির্বাচন করছেন বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকা থেকে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকীর নেতৃত্ব-গুণও ব্রিটেনবাসীর নজর কেড়েছে।
কর আর মজুরির লড়াই
এ নির্বাচনে স্বাস্থ্য খাত আর করের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আর বেশ কিছু বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কনজারভেটিভদের জনপ্রিয়তা কমেছে। স্বাস্থ্য খাতের এ বিষয়টি ব্রিটিশদের জন্য বেশ স্পর্শকাতর। একই সঙ্গে ধনীদের কর কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কনজারভেটিভরা।
এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের থাকা না থাকা নিয়ে গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে কনজারভেটিভ। এ বিষয়ে ২০১৮ সালে গণভোট আয়োজন করতে চায় এ দল।
অন্যদিকে লেবার পার্টির মূল এজেন্ডা শ্রমের মজুরি নিয়ে। ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘণ্টায় ৬.৫০ পাউন্ড থেকে বৃদ্ধি করে আট পাউন্ড করতে চায় লেবার পার্টি। একই সঙ্গে শিক্ষা খাতে ব্যয় কমাতে চায় লেবার পার্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি প্রতিবছর নয় হাজার পাউন্ড থেকে কমিয়ে ছয় হাজার পাউন্ডে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লেবার পার্টি। কেবল শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য খাতে অগ্রগতি আনতে এনএইচএস চালু করার কথা বলেছে এ দল। লেবার পার্টি আরো বলছে, ক্ষমতায় এলে ধনীদের ওপর করের বোঝা বাড়ানো হবে।
স্পষ্টতই বিপরীতমুখী দুই বড় দলের এজেন্ডা। এখন ব্রিটেনবাসীর ভবিষ্যৎ কী হবে আর অভিবাসীদের জন্যই বা সামনে কী অপেক্ষা করছে তা ৭ মের পরই বোঝা যাবে।