ঘূর্ণিঝড়ে হাইতিতে নিহত ৮৭৭
ক্যারিবীয় অঞ্চলে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ম্যাথিউর আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হাইতি। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে ৮৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা কাটিয়ে হাইতিকে আবার গড়ে তুলতে অনেক সময় লাগবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার হাইতির সরকার মৃতের সংখ্যা চার শতাধিক বলে জানিয়েছিল। তবে ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলে উদ্ধারকারী দল পৌঁছানোর পর মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাইতির সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ম্যাথিউর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শুধু হাইতির রোচে-এ-বাতেয়ু শহরে মারা গেছেন ৫০ জন। উপদ্বীপের মূল শহর জেরেমির ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়েছে। সাদ শহরের ৩০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
গত মঙ্গলবার হাইতি ও কিউবায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ম্যাথিউর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৩০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত সোম ও মঙ্গলবার ভারি বর্ষণ হয়। এ বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় হাইতির দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় দুর্যোগপীড়িত অনেক অঞ্চলে সাহায্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঘূর্ণিঝড় ম্যাথিউ ক্যারিবীয় অঞ্চল পার হওয়ার পর চার মাত্রার ঝড়ে রূপ নেয়, যা ঘূর্ণিঝড় হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেণির। ঝড়টি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের দিকে ধাবিত হয়। বর্তমানে এটি দ্বিতীয় মাত্রার ঝড়ের রূপ নিয়েছে এবং এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭৭ কিলোমিটার। ঘূণিঝড়ের প্রভাবে ফ্লোরিডায় পাঁচ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পর পরই হাইতি সরকার মৃতের সংখ্যা ১০০-এর কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছিল। অবশ্য বৃহস্পতিবার তারা মৃতের সংখ্যা ২৮৩ বলে জানায়। পরে শুক্রবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪০০ জনে, যা সর্বশেষ ঘোষণায় ৮৭৭ জন বলা হয়।
ঘূর্ণিঝড় ম্যাথিউ গত এক দশকের মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। হাইতি ও কিউবার ওপর দিয়ে এটি বয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইতির দক্ষিণ উপকূলের শহর ও মৎস্যজীবীদের গ্রাম। গাছের চাপা, উড়ে আসা ভাঙা টুকরোর আঘাত ও পানিতে ডুবে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
হাইতির সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক অঞ্চলে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
হাইতি থেকে বিবিসির সংবাদদাতা টনি ব্রাউন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম হাইতির ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে স্থানীয় মানুষই উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কোনো পুলিশ বা সেনাবাহিনীর সেবা পৌঁছাতে পারেনি।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, হাইতিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন।
আমেরিকান রেড ক্রসের মুখপাত্র সুজি ডি ফ্রান্সিস বলেন, হাইতিতে সহায়তা কার্যক্রমের শুরুতেই মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিক করা জরুরি। এমন প্রযুক্তি নিয়েই তাঁরা হাইতিতে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর কার্লোস ভেলসো বলেন, ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত কিছু অঞ্চলে শুধু আকাশপথে অথবা সাগর পারি দিয়ে পৌঁছানো সম্ভব।