পাচারকালে আরো ১৪০০ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা উদ্ধার
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম উপকূলে আরো চারটি নৌযান থেকে প্রায় এক হাজার ৪০০ শরণার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে উদ্ধার করা এদের সবাই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিক বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর আগের দিনই কাঠের নৌযান থেকে প্রায় ৬০০ জনকে উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, সব নৌযানই থাইল্যান্ডে বাধা পেয়েছে, কারণ সেখানে মানব পাচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে দেশটির সরকার।
পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এক হাজারের বেশি নাগরিককে মালয়েশিয়ার লঙ্কাবি দ্বীপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লঙ্কাবি পুলিশের উপপ্রধান জামিল আহমেদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইয়াহু নিউজ জানিয়েছে, 'আমরা ধারণা করছি, এক হাজার ১৮ জন অভিবাসী তিনটি নৌযানে ছিল।' তবে সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
urgentPhoto
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের প্রধান বুদিয়াওয়ান জানান. আজ সকালেই আরেকটি নৌযান থেকে ৪০০ নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে। এরাও মিয়ানমার ও বাংলাদেশের নাগরিক।
এএফপি জানিয়েছে, উপকূল অঞ্চলে শরণার্থী বহনকারী নৌযান পৌঁছানোর হার বাড়ছে। আচেহ প্রদেশের দুর্গম অঞ্চলে উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে স্থানীয়দের নিয়োগ দিয়েছে। বুদিয়াওয়ান বলেন, 'সংকেত পাওয়ার পর আমরা তাদের উদ্ধারে নেমে পড়ব, এ জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।'
ইয়াহু নিউজ জানায়, মিয়ানমারে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাস করে। এদের সবাইকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাঝেমধ্যেই জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনেক রোহিঙ্গা দেশটি ছেড়ে পালাচ্ছে।
হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমার থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে যায়। সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আশায় নৌযানে পাড়ি দেয়। তবে অনেকেই থাইল্যান্ডে মানব পাচারকারীদের কবলে পড়ে।
রোহিঙ্গাদের অধিকারবিষয়ক সংগঠন আরাকান প্রকল্পের কর্মকর্তা ক্রিস লেওয়া এএফপিকে বলেন, থাইল্যান্ডে সম্প্রতি মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তিনি ধারণা করছেন কয়েক হাজার অভিবাসী সমুদ্রে আটকা পড়েছে। তিনি বলেন, 'মানব পাচারকারীদের ব্যবসা করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে থাইল্যান্ড। এর ফলে তারা বাধ্য হয়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। দালালরা বন্দিশিবির হিসেবে জাহাজ ব্যবহার করছে।'
ক্রিস লেওয়া বলেন, 'মরে যাওয়ার আগে তারা তীরে নামার চেষ্টা করছে।' তিনি জানান, জাহাজে কোনো খাবার থাকে না। এ ধরনের আরো জাহাজ ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে আসতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করেন।
আগে পথ হারিয়ে বা জ্বালানির অভাবে নৌভর্তি রোহিঙ্গা আচেহ প্রদেশে আসত। তবে ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার সকালে প্রথম গ্রুপটি আচেহ প্রদেশের উপকূলে নামে, কারণ তাদের মিথ্যা কথা বলা হয়েছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা দারসা (অনেকের মতো তার এক শব্দের নাম) এএফপি বলেন, 'মালয় ভাষা বলতে পারেন এমন একজন অভিবাসী আমাকে বলেছেন যে, তাঁদের এজেন্ট (দালাল) বলেছে তাঁরা মালয়েশিয়ায় চলে এসেছে। এরপর সে সবাইকে সাঁতরে তীরে উঠতে বলে।'