কেন কান কেটে ফেলেছিলেন ভ্যান গঘ?
এক শতাব্দীর বেশি সময় পার হয়ে গেছে প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে। তবু এখনো কোনো শিল্পগবেষক সে প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর খুঁজে পাননি।
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ কেন নিজের বাঁ কান কেটে ফেলেছিলেন? মানসিক অসুস্থতা, প্রেম, রাগ, ঈর্ষা—এমন অনেক আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা চলেছে শিল্পানুগারীদের মধ্যে।
কিন্তু ভ্যান গঘ ঠিক কেন এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, কোনো গবেষক নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। সাধারণভাবে যে তত্ত্বটা ঘোরাফেরা করে, তাতে বলা হয় বন্ধু পল গগ্যাঁর সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদের পরে নিজের কানে ক্ষুর চালিয়ে দেন ভ্যান গঘ।
শিল্পের ইতিহাস নাড়াঘাঁটা করেন লেখক মার্টিন বেলি। তাঁর নতুন বই ‘স্টুডিও অব দ্য সাউথ : ভ্যান গঘ ইন প্রভেন্স’-এ সম্প্রতি দাবি করেছেন, নিজের ভাই থিওর বিয়ের কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন ভ্যান গঘ। তার পরেই ১৮৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর কান কেটে ফেলেন এ শিল্পী। মার্টিন বেলি মনে করেন, নিজের অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী থিওর বিয়ের খবরে চিন্তায় পড়ে যান গঘ। থিওর কাছে থেকে পাওয়া আর্থিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করেই নিশ্চিন্তে ছবি আঁকতেন তিনি। গঘকে তখনো কেউ চেনেই না সেভাবে। ছবি বেচে রোজগারের প্রশ্নই নেই।
বেলির গবেষণা অনুযায়ী বাসস এক প্রতিবেদনে জানায়, ভাই বিয়ে করলে শিল্পচর্চার কী হবে, তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ তৈরি হয় গঘের মনে। সে সময়ে গঘ পরিবারের মধ্যে যেসব চিঠি চালাচালি হয়েছিল, (এত দিন সেগুলো অপ্রকাশিত ছিল) সেগুলো ঘেঁটেই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেন বেলি।
১৮৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বরের রোববার থিওর কাছ থেকে একটা চিঠি পান ভ্যান গঘ। সঙ্গে ছিল একশ ফ্রাঁ।
চিঠিতে লেখা ছিল, দিন পনেরো আগে পুরোনো বান্ধবী জো বঙ্গারের সঙ্গে দেখা হয়েছে থিওর। জো একসময় থিওকে প্রেমে ফিরিয়ে দিলেও এবার বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে!
সেই ২৩ ডিসেম্বর গোটা দিনটা বন্ধু গগ্যাঁর সঙ্গে ছবি আঁকা নিয়েই মগ্ন ছিলেন গঘ। বৃষ্টি ছিল সারা দিন। রাত ঘনাতেই গঘের বাড়ি ছেড়ে প্যারিস চলে যাওয়ার হুমকি দেন গগ্যাঁ।
গবেষক বেলি বলছেন, এর পরে গগ্যাঁর সঙ্গে তর্কাতর্কি হলেও তার কারণটা আসলে থিওর চিঠির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে।
থিও ওই সময়েই বিয়ের জন্য মায়ের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। থিওর প্রেমিকা জো লিখেছিলেন তাঁর বড় ভাইকে।
বেলি নিশ্চিত, থিও তাঁর প্রেমিকার মতো নিজের ভাইকে খবরটা দিতে চেয়েছিলেন। ফ্রান্সের আর্ল-এর বিখ্যাত ‘ইয়েলো হাউস’-এ সেই চিঠিটি এসে পৌঁছানোর কিছু সময় পরেই ভ্যান গঘ কেটে ফেলেন নিজের কান।
ক্ষুরের ধারে বাঁ কান কেটে রক্তে ভেসে গেলেও কাটা কানের টুকরো কাগজে মুড়ে চেনা যৌনপল্লীতে পৌঁছে যান শিল্পী। সেখানে এক তরুণীকে দেন সেই কান। বার্নাডেট মার্ফির লেখা আরেকটি বই অবশ্য দাবি করে, গঘ কোনো যৌনপল্লীতে যাননি। স্থানীয় এক কৃষকের মেয়েকে দিয়েছিলেন ওই কান। মার্ফি আবার এর সমর্থনে এক চিকিৎসকের আঁকা একটি ছবির কথা বলেন। তার পরের ঘটনা অবশ্য সবার জানা। ওই তরুণী কাগজ খুলে কানের টুকরো দেখে মূর্ছা যান। ভ্যান গঘ পালিয়ে যান সেখান থেকে। পরে পুলিশ আসে।
পরদিন গঘের বাড়িতে চলে আসেন গগ্যাঁ। দেখেন, দোরগোড়ায় পুলিশ। রক্তে ভেজা বিছানায় পড়ে আছেন গঘ। ভাই থিও নিজের প্রেমিকার সঙ্গে বড়দিন কাটাবেন ভেবেও ভাইয়ের কথা শুনে ছুটে আসেন আর্ল-এর হাসপাতালে।
পরের বছর ৭ জানুয়ারি ছাড়া পান ভ্যান গঘ। তার পরে ভাইকে চিঠিতে শিল্পী লেখেন, ‘ভালো দিন আসবে খুব শিগগির। আমি আবার শুরু করব।’
এর পরে বেশ কয়েকবার অসুস্থতা সত্ত্বেও ছবিকে ছাড়েননি গঘ। এপ্রিলে আর্ল ছেড়ে চলে যান তিনি। তবে এই সংকটের সময়ে আঁকা বিভিন্ন ছবি শিল্পীর সেরা সৃষ্টির মধ্যে গণ্য করা হয়।