অভিবাসী সংকট বৈঠকে যোগ দিতে মিয়ানমারের গড়িমসি
বঙ্গোপসাগর দিয়ে অভিবাসী অনুপ্রবেশ সংকটের সমাধান অনুসন্ধানে চলতি মাসের শেষের দিকে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য এক আঞ্চলিক বৈঠকে মিয়ানমারের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
১ মে থেকে শত শত মানুষ নৌকায় করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে পৌঁছেছে। সে সময়ই থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ শংখলায় কয়েকটি গণকবরের সন্ধান মেলে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের অধিকাংশই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিক। এ ঘটনার সূত্র ধরে মানব ও পণ্য পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। মূল দালালরা অভিযান থেকে বাঁচতে নিজেদের নৌকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
থাইল্যান্ডের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, তারা সংকট দেখেও না দেখার ভান করছেন। এসব অভিযোগের ইতি টানতে থাইল্যান্ড সরকার আসছে ২৯ মে রাজধানী ব্যাংককে এক বৈঠকের আয়োজন করেছে। থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিবাসীদের এ উপচে পড়া ভিড়ের ‘মূল কারণ’ খুঁজে বের করাই হবে বৈঠকের মূল লক্ষ্য।
সমুদ্রে নৌযানে ভাসমান অভিবাসীদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের দারিদ্র্যপীড়িত পশ্চিমাঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলিম। আজ শুক্রবার মিয়ানমান অভিযোগ করেছে, মানবপাচার রোধে নিজের ব্যর্থতা থেকে চোখ সরাতে একটি আঞ্চলিক বৈঠককে ব্যবহার করতে চাইছে থাইল্যান্ড।
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পরিচালক জ তে এএফপিকে বলেন, ‘আমরা সম্ভবত যোগ দেব না... তারা (থাইল্যান্ড) যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে তা থেকে বাঁচতে তারা যদি আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে তবে আমরা সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করব না।’
জ তে আরো বলেন, ‘সংকটের মূল কারণ ক্রমবর্ধমান মানবপাচার। অভিবাসীদের গণকবর নিয়ে যে সমস্যা, তা মিয়ানমারের নয়। থাইল্যান্ডের মানবপাচার প্রতিরোধ ও আইনে বিদ্যমান দুর্বলতাই সমস্যার মূল কারণ।’
ব্যাংককে একদিনের এই বিশেষ বৈঠকে মিয়ানমার, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৫টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, বছরের প্রথম তিন মাসে বঙ্গোপসাগরে দিয়ে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্দেশে সমুদ্রযাত্রা করেছে।
জাতিসংঘ ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত এসব সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে। কিন্তু মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না।
এমনকি রোহিঙ্গাদের একটি আদিবাসী জাতি হিসেবেও স্বীকৃতি দিতে চায় না। বরং তাদেরকে বাইরের লোক বোঝাতে ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে।
এ সপ্তাহের শুরুতে জ তে বলেছিলেন, অভিবাসী সংকটের গোড়া বাংলাদেশে। যদিও এ ব্যাপারে তিনি কোনো যুক্তি বা প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।
২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০০ জন নিহত হয়।