ফিদেল কাস্ত্রোর দশকাহন
ফিদেল কাস্ত্রো নামেই তিনি সারা বিশ্বে পরিচিত। কিউবান এ নেতার পুরো নামটা বেশ বড়, ফিদেল আলেহান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ। সমাজতন্ত্রী ও বিপ্লবী নেতা ফিদেল কিউবাকে কেবল জয়ই করেননি, পুঁজিবাদী রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে মানবিক সমাজ গড়ার লড়াই করে গেছেন আমৃত্যু।
৯০ বছর বয়সে কিউবার স্থানীয় সময় শুক্রবার দিবাগত রাতে তিনি মারা যান। কাস্ত্রোর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ১০ ঘটনা :
ঘটনা ১
১৯২৬ সালে কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ওরিয়েন্টে প্রদেশে ফিদেল কাস্ত্রো জন্মগ্রহণ করেন। হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় ফিদেলের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। দেশটির তৎকালীন শাসক বাতিস্তার কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি। কিউবার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবকেও তিনি সহজে মেনে নেননি। এসব বিষয়ের ওপরই লেখালেখি শুরু করেন ফিদেল। এভাবেই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন।
ঘটনা ২
১৯৫৩ সালের সশস্ত্র দল নিয়ে মনকাডা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেন ফিদেল। সংঘর্ষে তাঁর দল পরাজিত হয়। সামরিক শাসক বাতিস্তার নির্দেশে তাঁর ৮০ সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে বাতিস্তার হত্যার আদেশ থেকে বেঁচে বেসামরিক কারাগারে ঠাঁই পান কাস্ত্রো। কারাগারে তাঁকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জনমতের কথা বিবেচনা করে ফিদেলকে হত্যা না করে বিচারের মুখোমুখি করেন বাতিস্তা। বিচারে ফিদেলের ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। তবে প্রবল জনমতের কাছে মাথা নত করে দুই বছরের মাথায় ফিদেলকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন বাতিস্তা।
ঘটনা ৩
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মেক্সিকোয় পাড়ি জমান ফিদেল। গড়ে তোলেন বিপ্লবী দল ‘২৬ জুলাই আন্দোলন’। ১৯৫৩ সালে ২৬ জুলাই মনকাডা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেছিলেন ফিদেল। ওই তারিখ দিয়েই দলের নাম দেন ২৬ জুলাই আন্দোলন। ১৯৫৫ সালে ওই দল সংগঠিত করেন তিনি।
ঘটনা ৪
বিপ্লবী চে গুয়েভারার সঙ্গে ফিদেলের প্রথম দেখা হয় মেক্সিকোতে ১৯৫৫ সালে। ফিদেলের কথায় বেশ উৎসাহিত হন চে গুয়েভারা। পরে ২৬ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি।
ঘটনা ৫
বিপ্লবী চে গুয়েভারা ও জুয়ান আলমেইদাকে নিয়ে গড়া বিপ্লবী দল নিয়ে ১৯৫৬ সালে কিউবা আসেন ফিদেল। গেরিলারা একের পর এক শহর দখল করতে থাকে। স্থানীয় জনতা গেরিলাদের অভ্যর্থনা জানায়। ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি বাতিস্তার প্রায় এক হাজার সেনা গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান, বোমা, জাহাজ ও ট্যাংক পাঠিয়ে গেরিলাদের হটানোর চেষ্টা করে। ফিদেলের সেনারা চারদিক থেকে রাজধানী হাভানাকে ঘিরে ফেলে। ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি কিউবা ছেড়ে পালিয়ে যান বাতিস্তা। দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারী শাসক ফুলগেনাসিয়ো বাতিস্তা ক্ষমতা হারান ফিদেল কাস্ত্রো-চে গুয়েভারার গেরিলা বাহিনীর কাছে।
ঘটনা ৬
ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর মদদপুষ্ট কিউবার নির্বাসিত ব্যক্তিদের চালানো অভিযান প্রতিহত করেন। ইতিহাসে এটা ‘বে অব পিগস’ অভিযান নামে পরিচিত।
ঘটনা ৭
কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ফিদেল ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ঘটনা ৮
১৯৭৬ সালে কিউবার জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে কিউবার শরণার্থী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে ২০০৮ সালে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেন। বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। রাউল দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সহকারী প্রধান। ১৯৬১ সালে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কিউবা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো।
ঘটনা ৯
১৯৪৮ সালে ফিদেল মার্তা দিয়াজ-বালার্তকে বিয়ে করেন। ওই দম্পতির ঘরে জন্ম নেন ছেলে ফিদেলিতো। পরে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৫২ সালে চিকিৎসক ন্যাতি রেভুলেতাকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তাদের ঘরে মেয়ে আলিনার জন্ম হয়। ১৯৫৭ সালে তিনি সেলিয়া সেনচেজকে বিয়ে করেন এবং ১৯৮০ সালে সেলিয়া সেনচেজ মারা যান।
ঘটনা ১০
আশির দশকে ফিদেল আবার বিয়ে করেন। ডালিয়া সোতো দেল ভ্যালির সঙ্গে দাম্পত্যজীবনে তাঁদের পাঁচটি সন্তান হয়। তাঁরা হলেন অ্যাঞ্জেল, অ্যান্টোনিও, আলেজান্দ্রো, অ্যালেক্সিস ও অ্যালেক্স।