কাতারে ‘শ্রমিকের অভিশাপ কাফালা’ শেষ হচ্ছে আজ
কাতারে ‘শ্রমিকদের অভিশাপ’ হিসেবে পরিচিত ‘কাফালা’ পদ্ধতি শেষ হচ্ছে আজ থেকে। শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য 'কাফালা' হিসেবে পরিচিত দেশটির শোষণমূলক এই ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা হয়ে আসছে।
বিবিসি বাংলা এক খবরে জানায়, চলতি বছরের শুরুতে কাতারে এই প্রথাটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। আর তা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।
এত দিন ধরে কাতারে সব বিদেশি শ্রমিকের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তাঁদের কাফিল বা স্পন্সর। বেতন ভাতা ঠিক সময়ে না পেলে, কিংবা শোষণের শিকার হলেও চাকরি ছাড়ার উপায় ছিল না শ্রমিকদের। ছিল না অন্যখানে ভালো চাকরির কিংবা কাফিল বদলানোর সুযোগও। চাকরি ছাড়া কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে দেশে ফিরে এলে আরোপ করা হতো দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন জরিমানা। এই কাফালা পদ্ধতি একপর্যায়ে ‘শ্রমিকদের অভিশাপ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, দেশটিতে এখন প্রচুর অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, যাতে মূলত নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারতের কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করছে। ২০২০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জন্য দেশটিতে পাঁচটি নতুন স্টেডিয়াম বানানো হচ্ছে। আর এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে খালিজ টাইমসকে জানিয়েছেন দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
দেশটির শ্রম আইনে সংশোধনের ফলে কাফালা পদ্ধতির পরিবর্তে এখন থেকে সব নিয়োগ হবে চুক্তিভিত্তিক। সেই সঙ্গে আগে থেকে সেখানে থাকা শ্রমিকদের চুক্তিও নতুন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হবে। এ ছাড়া দেশে ফিরতে হলেও কাফিলের অনুমতি কিংবা অনাপত্তির প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে একজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে যদি কোনো আইনি অভিযোগ না থাকে, সে ইচ্ছে ও প্রয়োজন মতো নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে।
এ ছাড়া চাকরি পরিবর্তন করতে চাইলে, নতুন আইন অনুযায়ী এখন থেকে সেটি আর অসম্ভব নয়।
বর্তমান কাফিলের সাথে চুক্তি শেষ হলে কিংবা এক প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর কাজ করার পর একজন শ্রমিক চাইলে অন্যত্র কাজ করতে পারবে। তবে, এ ক্ষেত্রে কাফিলের অনুমতির প্রয়োজন হবে।
তবে, নতুন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একজন শ্রমিককে বর্তমান নিয়োগকারীর অনুমতি ছাড়াই নিয়োগ দিতে পারবে। এ ছাড়া কাতারের শ্রম অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে একজন শ্রমিক কাফিল বা স্পন্সর পরিবর্তন করতে পারবে।
এ ছাড়া চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে, নিয়োগকারী এবং সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে তা করতে পারবে একজন বিদেশি শ্রমিক।
তবে নতুন আইনের অপব্যবহার হতে পারে, এমন আশংকা করছে অনেক শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনগুলো বলছে, যেহেতু এখন থেকে সকল বিদেশি শ্রমিককে চুক্তিতে নিয়োগ করা হবে, ফলে নিয়োগকারীর খুশিমতো শ্রমিক ছাঁটাই হওয়ার আশংকা রয়েছে।
কোনো শ্রমিক যদি ছাঁটাই হয় এবং সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ না করে কিংবা যদি তার অভিযোগ আদালত আমলে না নেযন, সেক্ষেত্রে নতুন আইন অনুযায়ী ওই শ্রমিক পরবর্তী চার বছরের মধ্যে আর কাতারে কাজের অনুমতি পাবে না।
এ ছাড়া, আদালতে রায়ে যদি কোনো শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী সময়ে কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া সে দেশে আর ঢুকতে পারবে না ওই ব্যক্তি।
কাতার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। সরকারি হিসেবে এই বছরও এখন পর্যন্ত দেশটিতে এক লাখের মতো বাংলাদেশি গেছে। এর আগে কাতার বিদেশি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে না, এমন অভিযোগ শোনা গেছে।
ইতিমধ্যেই তার সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠন।