মলদোভা কি ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্ত হবে?
ইউরোপের অন্যতম ছোট ও দরিদ্র রাষ্ট্র মলদোভা। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হয়েছে দেশটি। তারপরেই ইউরোপীয় পলিটিকাল কমিউনিটি (ইপিসি) সামিটের দায়িত্ব পড়েছে দেশটির ওপর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) মলদোভার রাজধানীর সামান্য দূরে মিমি ক্যাসেল ও ওয়াইনারিতে একত্রিত হবেন বিশ্বনেতারা। ইতোমধ্যে সেখানে পৌঁছে গেছেন ৪৭ দেশের রাষ্ট্রনেতারা।
রাশিয়া ও বেলারুশ ছাড়া ইউরোপের অধিকাংশ দেশই ইপিসির অন্তর্ভুক্ত। আরও বেশ কিছু দেশকে এর আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে। তুরস্ক, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মতো দেশগুলোকেও এই সামিটে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, কসোভো, বসনিয়াও এতে অংশ নেবে বলে জানা গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই সামিটে ইউক্রেন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হবে। কীভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও বেশি করে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে পারে, সেই বিষয়ে কথা বলবেন নেতারা।
এর আগে প্রথম ইপিসি সামিট হয়েছিল প্রাগে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা প্রায় সবাই সেখানে একটি বিষয়ে কার্যত সহমত হয়েছিলেন—ইপিসি আলোচনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মঞ্চ। ফলে ইউক্রেনকে সামনে রেখে আরও বিস্তারিত আলোচনার সম্ভাবনা আছে এই বৈঠকে।
রোমানিয়া ও ইউক্রেনের মাঝে ছোট্ট রাষ্ট্র মলদোভা। ১৯৯২ সালে দেশটির একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ এই অংশের নাম ট্রান্সনিস্ট্রিয়া। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওই অঞ্চলে রাশিয়া নিজেদের সেনা মোতায়েন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বড় প্রশ্ন হলো—ইউক্রেনের পর রাশিয়া আরও পশ্চিমে অগ্রসর হবে কি না। সেক্ষেত্রে মলদোভাকে গ্রাস করা রাশিয়ার পক্ষে খুব কঠিন কাজ নয়। এই বিষয়টি মাথার রেখে মলদোভাকে ক্রমশ ইউক্রেনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এবারের সামিটে এই বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।
এছাড়া এই সামিটের আরেকটি লক্ষ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবাইকে একত্রিত করা। সেই কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের কিছু দেশকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় নেতাদের অনেকেই মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও বড় করা প্রয়োজন। কিন্তু ইইউতে যুক্ত হওয়ার নিয়ম খুবই কঠিন। সেই নিয়ম কীভাবে বদলানো যায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী মঞ্চ কীভাবে গড়ে তোলা যায়, এসব বিষয়গুলো আলোচনা হবে এই সামিটে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন। এই সামিট থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ পাওয়া যাবে বলেই তিনি মনে করেন। গত ইপিসি সামিটে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলোর ছোটবেলার সমস্যা হলো, তারা মাঝে মাঝেই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই রাস্তা থেকে সরে গিয়ে সবাইকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একত্রিত হতে হবে।’
ইউরোপের একাধিক দেশে কার্যত গৃহযুদ্ধের মতো অবস্থা। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে গণ্ডগোল চলছে। তুরস্কের নিজস্ব সমস্যা আছে। কসোভোয় বিক্ষোভ চলছে। বসনিয়া দীর্ঘ সময় লড়াই দেখেছে। এই ছোট ছোট লড়াইগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে শক্তিশালী ইউরোপ তৈরি হবে না বলেই মনে করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।